বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, চলমান মহামারী পরিস্থিতিতে সকল শিল্প কল কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঈদের পূর্বেই দিয়ে দিন যাতে করে শ্রমিকরা তাদের পরিবার নিয়ে ঈদ উৎসব করতে পারে। দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে প্রতিবছরই কিছু কিছু মালিক ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাস এবং বেতন ভাতা নিয়ে টালবাহানা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ গার্মেন্টস মালিকই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেন না, দিলেও তা হয় ইচ্ছামাফিক। এতে কারখানার শ্রমিকদের অমানবিক অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। যার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করে।ফলে তারা ও তাদের পরিবার নিয়ে ঈদ উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়। যেটা আমাদের কারো কাম্য নয়। তাই অবিলম্বে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী মেনে নিয়ে ঈদের পূর্বেই তাদের বেতন বোনাস পরিশোধ করতে হবে।গতকাল তিনি এক বিবৃতিতে এই কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণে শ্রমিকরা যখন অর্ধাহারে, অনাহারে জীবনযাপন করছে, যখন ঠিকমতো মজুরি পাচ্ছে না তখন এই করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে মালিকরা ইতোমধ্যে শ্রমিকদের বোনাস না দেয়ার টালবাহানা শুরু করেছে। অনেক মালিক অযৌক্তিকভাবে কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, যা শ্রম আইনের অপপ্রয়োগ ও অমানবিক।শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এমতাবস্থায় চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শ্রমিকের হাতে অর্থ না পৌঁছালে তাদের বাড়ি ভাড়া এবং খাদ্য ব্যয় যোগান দেয়া সম্ভব হবে না। ফলে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ রপ্তানী আয় করা গার্মেন্ট শিল্পের দক্ষ শ্রমশক্তি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হবে।
করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায়। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে কারখানা বন্ধ থাকলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরির জন্য সরকার মালিকদের পাঁচ হাজার কোটির আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিকদের কত শতাংশ মজুরি দেয়া হবে তা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক এবং সময়ক্ষেপণ। এতে করে শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং আন্দোলন করতে তারা বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টসের বাইরেও পরিবহণ শ্রমিক, নৌযানশ্রমিক, রি-রোলিং ও স্টিল মিল শ্রমিক, , চা-শ্রমিক, গৃহকর্মী, সেলুন কর্মী, হোটেল-রেঁস্তোরার কর্মী, হস্তশিল্পী, ছাপা-মুদ্রণ ও বাঁধাই শ্রমিক, স্বর্ণকার, দর্জিশ্রমিক, হকার, দোকানকর্মচারীসহ অনেক খাতের শ্রমিক। যার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। ওই সকল শ্রমিকরাও অনিশ্চতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অথচ কয়েকদিন পরেই ঈদ। তাই ঈদের আগেই সকল শ্রমিকের বকেয়া বেতন-ভাতা, চলতি মে মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে এবং শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও ছাটাইকৃত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের প্রতি তিনি আহবান জানান।