বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, একটি বছর পেরিয়ে আবারও মাহে রমাদান আমাদের নিকট সমাগত। মাহে রমাদান মুসলমান তথা বিশ^বাসীর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বড় নিয়ামত। রমাদান মাসে বিশ^বাসীর হেদায়েতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল কুরআন হচ্ছে সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী, মানুষের সমগ্র জীবনের পথ নির্দেশিকা। সুতরাং বছরের অন্য মাস গুলোর তুলনায় রমাদান মাস আল্লাহর কাছে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার হেদায়েতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, খোদাভীতি এবং তার নৈকাট্য অর্জনের জন্য রমদান মাসকে সুস্পষ্টভাবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি আজ পবিত্র মাহে রমাদান যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ আহবান জানিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
শামসুল ইসলাম বলেন, মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র কিভাবে পরিচালিত হবে সে পথ নির্দেশিকা হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন প্রেরণ করেছেন। তাই রমাদান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। রমাদান মাস জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা দেয়। দুনিয়াবী ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানায় মাহে রমাদান। অতীতের গুনাহ খাতা ধুয়ে মুছে আল্লাহর অনুকম্পা ও ক্ষমা লাভের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পাওয়া যায় এই পবিত্র মাসে। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই মহাসুযোগ কাজে লাগিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হওয়ার দৌড়ে অগ্রগামী হওয়া। রমাদান মাসে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) শ্রমিকের কর্ম ঘন্টা হ্রাস করে দেওয়ার কথা বলেছেন। মেহেনতি শ্রমিকেরা যেন পবিত্র এই মাসে নিজেদের কে আল্লাহর দরবারে সপে দিতে পারে সেই জন্য তিনি রাসূল (সাঃ) ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য মালিক পক্ষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ইফতার সেহেরীর জন্য বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুশি হবেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াম সে লাভ করবে। তাই মালিক পক্ষ ও বিত্তবানরা অসহায় দিনমজুর মেহেনতি শ্রমিকদের ইফতার করিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের বিরাট সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমাদান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে শ্রমজীবী মানুষদের বিপদে ফেলে। অবিলম্বে সরকারকে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। চাল, ডাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। ২০ রমাদানের মধ্যে শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে। সমাজের বিত্তবানদেরকে অসহায় দিনমজুর ও নিম্ম আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
জনাব ইসলাম বলেন, বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মিকে আবারও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার পুনরায় লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই দেশের অধিকাংশ শ্রমিক দিনে এনে দিনে খেয়ে বেঁচে থাকে। তাদের কোন সঞ্চিত অর্থ সম্পদ নেই। তার ওপর প্রায় বছর ব্যাপী চলতে থাকা এই দুর্যোগ অধিকাংশ শ্রমিকের আয়ের ওপর আঘাত হেনেছে। এই কঠিন দুর্দিনে আবারও লকডাউন শ্রমিকের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এমতাবস্থায় সরকারি ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিটি শ্রমিকের জন্য নগদ অর্থ সহযোগিতার পাশাপাশি খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়ে শ্রমিকের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলতে হবে। অন্যথায় এই পবিত্র মাসে শ্রমিকের দুঃখ দুর্দশার কোন কূল থাকবে না।