বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, আধুনিক পৃথিবীর রূপ-লাবণ্যতার পেছনে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের কৃতিত্ব। নতুন নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার কারিগর মেহনতি শ্রমিকরা। আজ আক্ষেপের সাথে বলতে হয় সভ্যতার উদয় যে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত ঘামে রচিত হয় তারা আজ সর্বদা সমাজ রাষ্ট্রে উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত। কালের আবর্তনে তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের সংগ্রাম চালাচ্ছি এবং আগামী দিনেও অবিরাম চলবে।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের আহবান জানিয়ে এক শুভেচ্ছা বাণীতে এসব কথা বলেন।
জনাব শামসুল ইসলাম বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা যুগের পর যুগ অত্যাচারিত, নির্যাতিত-নিপীড়ত, শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এটাই যেন তাদের ভাগ্যের নিয়তি। ১৮৮৬ সালে শিকাগো শহরে সঠিক ন্যায্য মজুরি ও ৮ ঘন্টা কর্মের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার আদায়ের প্রেরণা যুগায়। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের স্মৃতিবিজড়িত আন্দোলন আমাদের সকল শোষণ-বঞ্চনা রুখে দিয়ে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আশ্বানিত্ব করে। তাই এই দিনকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা একান্ত জরুরী।
তিনি আরো বলেন, শিকাগোর আন্দোলন শ্রম আন্দোলনের একটি ইতিহাস কিন্তু শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার জীবদ্দশায় দুনিয়াবাসীর সামনে এক চির শাশ^ত অনুপম শ্রমনীতি উপস্থাপন ও বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বে তাদের প্রাপ্য মজুরী দিয়ে দাও। তিনি অন্যত্র বলেছেন, শ্রমিককে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দিবে না, দিলে তাকে সে কাজে সহযোগিতা করো। তিনি আরো বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা-ই খেতে দাও, যা তুমি খাও। তাকে তাই পরিধান করতে দাও, যা তুমি পরিধান করো। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি এই ইনসাফ পূর্ণনীতি শুধু সেই সময়ের জন্য নয়, বরং কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ।
জনাব ইসলাম আরো বলেন, আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সারাবিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমজীবী মানুষরা। কর্ম হারিয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। দিনমজুর ও দিনে এনে দিনে খায় শ্রমিকদের নিত্য দিনের খাদ্য চাহিদা পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে খাবার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করাও তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আমি সরকারসহ সামর্থ্যবান লোকদের শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মহান মে দিবস আমরা যেন আক্ষরিক অর্থে পালন না করি। বরং মে দিবসের প্রকৃত চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য ১৫ দাবি পেশ করেছে। আমি সরকার ও মালিকদের উক্ত দাবি সমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। মহান মে দিবস উদযাপনের জন্য ফেডারেশন পক্ষ থেকে আগামী ১-৭ মে সপ্তাহব্যাপী নিম্মোক্ত কর্মসূচি পালন করা হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ফেডারেশনের কর্মসূচি সমূহ
১. মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানার উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে র্যালী ও আলোচনা সভা।
২. জাতীয় ইউনিয়ন, ক্রাফট ফেডারেশন ও সকল ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে র্যালী ও আলোচনা সভা।
৩. অস্বচ্ছল, কর্ম-অক্ষম ও কর্মস্থলে আহত, নিহত এবং পঙ্গুত্ববরণকারী শ্রমিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
৪. সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ।
৫. বেকার শ্রমিকদের কর্ম-সংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান।
৬. শ্রমিক পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ।
৭. অনাথ ও পথ শিশুদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ।
৮. মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানার উদ্যোগে পোস্টারিং, লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ।
৯. শ্রমিকদের মাঝে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ।
১০. শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ ও উপহার সামগ্রী প্রদান।
আমি উক্ত কর্মসূচি সমূহ যথাযথভাবে পালনের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সকল শাখা, ট্রেড ইউনিয়ন ও সর্বস্তরের শ্রমজীবী ভাইবোনদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
আমি আজকের দিনে সকল মালিক ভাইদের প্রতি একটি বিশেষ আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু! শ্রমজীবী মানুষের এই দুর্দিনে মালিক ভাইয়েরা তাদের প্রতি সদায় ও দায়িত্ববান হোন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করুন। আল্লাহর বন্ধুদের এই দুর্দিনে যে সকল মালিক ভাইয়েরা তাদের পাশে থাকবেন নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা এই সকল মালিক ভাইদের আখেরাতে সম্মানিত করবেন। ঈদুল ফিতরের পূর্বেই শ্রমিকের সকল বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ করুন।
মহান মে দিবস সফল হউক। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হউক।