আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্ব-স্থান হতে নড়তে দেয়া হবে না।
১) তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে।
২) যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে।
৩) ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে।
৪) তা কিভাবে ব্যয় করেছে।
৫) সে দীনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কিনা। (তিরমিযী-৪/২৪১৬)
রাবীর পরিচয়
ইবনে মাসুদের মূল নাম আবদুল্লাহ। তার পিতার নাম মাসুদ। কুনিয়াত নাম আবু আবদির রহমান। মাতার নাম উম্মে আবাদ। জন্ম ৫৯৪ খৃষ্টাব্দে মক্কায় তামিম গোত্রে তিনি কিশোর বয়সে কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার উকবা ইবনু আবু মুইতের একপাল ছাগল চড়াতেন। রাসূল (সা.) ও আবু বকর রা. এর সাথে ছাগল সংক্রান্ত তার ঘটনা এরপর তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক অবস্থায় যে কয়জন মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) ছিলেন তাদের একজন। তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন এবং নবী করিম (সা.) এর মদিনায় হিজরতের পর মদিনায় চলে আসেন। তিনি সর্বদা রাসূল (সা.) এর খেদমতে নিয়োজিত থাকতেন এবং ছায়ার মতো তাকে অনুসরণ করতেন। হযরত আবু মুসা আশয়ারী বলেন, “আমরা ইয়েমেন থেকে এসে বহুদিন পর্যন্ত ইবনে মাসুদ (রা.) কে নবী পরিবারের লোক বলে মনে করতাম।”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তিনি কুরআন, হাদিসসহ ইত্যাদি সব বিষয়েই সমান পারদর্শী ছিলেন। মদীনার যে কয়জন সাহাবী ফতোয়া দিতেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। কোরআন শিক্ষায় তিনি ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। নবী করিম (সা.) বলেন: “কুরআন শরীফ যেভাবে নাজিল হয়েছে হুবহু সেভাবে যদি কেউ পড়তে চায় সে যেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের কাছে যায়।”
এই জ্ঞানের বিশাল মহিরূহ হিজরী ৩২ সালে মদিনায় ইন্তেকাল করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে তাকে কবর দেওয়া হয়। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৮৪৮ টি। ইমাম বুখারী ও মুসলিমের ঐক্যমতে হাদিস ৬৪টি, তাছাড়া বুখারী ২৬৪টি এবং মুসলিম ৩৫টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের গুরুত্ব
আলোচ্য হাদিসে মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধন কল্পে আখিরাতের জবাবদিহির অনুভূতি জাগ্রত করার প্রয়াস পেয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি ও পরকালের জবাবদিহির অনুভূতি জাগ্রত না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত নৈতিক চরিত্র সংশোধনের আশা করা বৃথা, কারণ আমাদের এ জীবনের পর অনন্তকালের এক জীবন আছে এবং সে জীবনের সাফল্য এবং ব্যর্থতা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে এ জীবনের কর্ম ফলের ওপর; আর প্রতিটি কর্মেরই সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হবে একমাত্র এই অনুভূতিই মানুষকে মহৎ হতে বাধ্য করে।
তাছাড়া পার্থিব জীবনের আচার আচরণ সম্বন্ধেও ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে এ হাদিসের মধ্যে। তাই প্রতিটি মুসলমানের জীবনে এ হাদিসটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ব্যাখ্যা
১. তাঁর জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত হয়েছে
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য, যেমন কুরআনে বলা হয়েছে “আমি মানুষ ও জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। (সূরা জারিয়াত -৫৬)
ইবাদত করতে প্রতিটি মানুষ অথবা জ্বীনকে জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামী করার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়োবুদুন শব্দটি আবদুন শব্দ হতে নির্গত আর আব্দুন শব্দের অর্থ হলো গোলাম বা দাস। কাজেই দাসত্ব বা গোলামী জীবনের কোনো একটি সময় বা মুহুর্ত পর্যন্ত সীমিত নয় বরং সমস্ত জীবন ব্যাপী এ দায়িত্ব। সূরা বাকারার ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘‘হে মানুষ তোমরা তোমাদের পালন কর্তার দাসত্ব করো। যিনি তোমাদের ও পূর্ববতী সকলকে সৃস্টি করেছেন যাতে তোমরা তাকওয়াহ অর্জন করতে পারো’’।
অন্যত্র বলা হয়েছে তোমরা কি মনে করেছ আমরা তোমাদেরকে অকারণেই সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে কখনই আমার নিকট ফিরে আসতে হবে না। (মুমিনুন-১১৫)
তাই দেখা যায় পৃথিবীর প্রতিটি চাকচিক্যময় বস্তু মানুষের পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এ পরীক্ষার সফলতা বা ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করেই শুরু হবে পরকালের জীবন। সত্যি কথা বলতে কি ছোট্ট একটি প্রশ্নের উত্তর সমস্ত জীবনব্যাপী বিস্তৃত। সূরা মারিয়াম ৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন “এদেরকে বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে লিপ্ত হয় করুণাময় তাকে ঢিল দিতে থাকেন, এমনকি এ ধরনের লোকেরা যখন এমন জিনিস দেখে নেয় যার ওয়াদা তাদের সাথে করা হয়- তা আল্লাহর আযাব হোক বা কিয়ামতের সময়- তখন তারা জানতে পারে, কার অবস্থা খারাপ এবং কার দল দুর্বল!”
২. যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে
প্রতিটি বস্তুরই একটি উৎকৃষ্ট অংশ থাকে আর জীবনের উৎকৃষ্ট অংশ হচ্ছে যৌবন কাল। নিম্নে চারটি গুণের পরিপূর্ণ সমাবেশ ঘটে এই যৌবনে।
ক. চিন্তা শক্তি খ. ইচ্ছা শক্তি গ. মনন শক্তি ঘ. কর্ম শক্তি
অতএব দেখা যাচ্ছে ভালো অথবা মন্দ যে কাজই করা হোক না কেন যৌবনের শক্তিই তার প্রধান উপজীব্য। মানবীয় চরিত্রের অসৎ বৈশিষ্ট্য গুলো যেমন- অন্যায়,অনাচার, অসততা, মিথ্যা প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, জুলুম, নির্যাতন, অহংকার ইত্যাদি সব কিছুই করে যৌবন কালে । দেখা যায় যৌবনে দুধর্ষ প্রবল প্রতাপশালী ব্যক্তি বার্ধক্যে নেহায়েত গোবেচারায় পরিণত হয়। কারন বার্ধক্য মানুষকে নিরীহ করে দেয়। তাই বার্ধক্য যেমন অন্যায় অত্যাচারের পথ রুদ্ধ করে দেয় তদ্রুপ যতো সৎ নিয়ত এবং প্রচেষ্টাই থাকে না কেন বার্ধক্য আসার পর কোনো একটি ভালো কাজও সুচারু রূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না, এখানে বার্ধক্য তার প্রধান অন্তরায়। এজন্য যৌবন এত গুরুত্বপূর্ণ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে – পাঁচটি বস্তুকে গণিমতের মাল বলে মনে করতে হবে। তার একটি হলো বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনের।” (মিশকাত)। অনেকেই মনে করে যৌবন যা কিছু মনে চায় করে বার্ধক্য আসার পর আল্লাহর নিকট তওবা করে সৎকাজে মনোনিবেশ করবো। এই চিন্তা মানুষকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। মানুষের চিন্তার এই অসারতাই অত্র হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। এ জন্যই পরকালের প্রশ্নাবলীর মধ্যে যৌবন সংক্রান্ত প্রশ্নটি অন্যতম। সূরা নিসার ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, কিন্তু তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা খারাপ কাজ করে যেতেই থাকে, এমন কি তাদের কারো মৃত্যুর সময় এসে গেলে সে বলে, এখন আমি তাওবা করলাম। অনুরূপভাবে তাওবা তাদের জন্যও নয় যারা মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কাফের থাকে। এমন সব লোকদের জন্য তো আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।
৩.ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে
মানুষ পৃথিবীতে ভোগের জন্য সর্বদা পাগলপারা। তার একটা লক্ষ্য ধন সম্পদের স্তুপে সুখের সন্ধান করা। এ জন্য চুরি, ডাকাতি, অপরের সম্পদ হরণ অথবা ধোকাবাজী যা কিছু হোকনা কেন তাতে পরওয়া নেই। আর এভাবে যদি কোনো সমাজ চলে তবে সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমাজের ভারসাম্য বজায় রেখে একটি সুখী সমৃদ্ধশীল সমাজ কায়েমের লক্ষে ধন-সম্পদ আয় এবং তার ব্যয়ের মধ্যেও শর্তারোপ করেছেন।
নিম্নে সম্পদ অর্জনের মৌলিক বিধি নিষেধ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সূরা শুরার ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ যদি তাঁর সব বান্দাদেরকে অঢেল রিযিক দান করতেন তাহলে তারা পৃথিবীতে বিদ্রোহের তুফান সৃষ্টি করতো। কিন্তু তিনি একটি হিসাব অনুসারে যতটা ইচ্ছা নাযিল করেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে অবহিত এবং তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। সূরা তাকাসুরে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মোহচ্ছন্ন করে রেখেছে প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা। সূরা হাজ্জ ২৩-নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “(অন্যদিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তো দিয়ে সাজানো হবে এবং তাদের পোশাক হবে রেশমের।”
১. কারও অধিকার নষ্ট করে সম্পদ অর্জন করা যাবে না। যেমন মিরাসের অংশ না দিয়ে অথবা মোহরানার প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে ভোগ করা এতিমের মাল ভোগ করা ইত্যাদি। সুরা নিসার ২ নং ও ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ইয়াতিমদের তাদের সম্পদ দিয়ে দিবে এবং ভালোর সাথে মন্দের পরিবর্তণ করবেনা। তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ মিশ্রন করবেনা এবং নারীদের মোহর দিয়ে দাও। অতঃপর যদি তারা খুশি হয় এর কিছু অংশ ছেড়ে দাও। তোমরা স্বাছন্দে ভোগ করতে পারবে।
২. ব্যভিচার বা কোন ব্যাভিচারের সাথে সম্পৃক্ত কাজের মাধ্যমে ও সম্পদ অর্জন করা যাবে না। খাদিজা রাঃ বলেন রাসুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যিনা কারির উর্পাজন নিকৃষ্ট।
৩. চুরি, ডাকাতি, হত্যা, লুন্ঠন, ইত্যাদির মাধ্যমেও জীবিকা বা সম্পদ অর্জন করা যাবে না। মায়েদার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলিবিদ্ধ করা হবে বা তাদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে। অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় তাদের জন্য এ অপমান ও লাঞ্ছনা নির্ধারিত রয়েছে আর আখেরাতে রয়েছে তাদের জন্য এর চাইতেও বড় শাস্ত।
৪. কাউকে ধোকা দিয়ে বা ঠকিয়ে ধন সম্পদ অর্জন করা যাবে না। সূরা নিসার ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না। লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক রেজামন্দির ভিত্তিতে। আর নিজেকে হত্যা করো না। নিশ্চিত জানো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি মেহেরবান।
৫. গান, বাজনা, অভিনয় ইত্যাদিকেও জীবনের পেশা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।
৬. হারাম মালের দ্বারা ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা যাবেনা। সূরা নুর ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা ব্যবসায় ও বেচাকেনার ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফিল হয়ে যায় না। তারা সেদিনকে ভয় করতে থাকে যেদিন হৃদয় বিপর্যস্ত ও দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে।
৭. মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্য সামগ্রী ৪০ দিনের অধিক জমা রেখে ঐ মুনাফা লব্ধ টাকার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি করা যাবেনা।
৮. সুদ অথবা ঘুষের মাধ্যমে সম্পদ আহরন বা বর্ধিত করা যাবে না। সুরা রুম ৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে।
৯. জুয়া, হাউজি, ভাগ্য গণনা, লটারী ইত্যাদির মাধ্যমেও সম্পদ অর্জন করা যাবে না। সুরা মায়েদার ৯০-৯১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তাহলে তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে?
১০. ওজনে কম দেওয়া।
উপরের বিধি গুলি সামনে রেখে উপার্জন করতে হবে
৪.তা কিভাবে ব্যয় করেছে
ব্যয়ের মৌলিক খাত সমূহ নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যয় করার অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে কিন্তু শর্তারোপ করা হয়েছে অপচয় না করার। সুরা বনী ইসরাইলের ২৬ ও ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও। বাজে খরচ করো না।
নিশ্চয়ই যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।
সূরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে বনী আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও। আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
২. নেছাবের মালিক হলে যাকাত দিতে হবে। সুরা বাকারার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন -নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। ৩. ছাদকা।
৪. নিকট আত্মীয়ের হক
সূরা নিসার ১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে মানব জাতি! তোমাদের রবকে ভয় করো। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দু’জনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় করো যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন।
৫. ইয়াতিমের হক সুরা নিসা ২ নং এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না। এটা মহাপাপ।
৬. মিসকীনের হক, ভিক্ষুকের হক। সূরা নিসার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরকেও ঐ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলো।
৭. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ
৮. বিভিন্ন ধরনের কাফ্ফারা আদায়
৯. পথিক বা পর্যটকের হক।
বস্তুত প্রত্যেকটি বনী আদমকেই প্রশ্ন করা হবে যে উপরোক্ত শর্তাবলীই পালন করেই সে সম্পদ আয় ও ব্যয় করেছে কি না?
৫.দ্বীনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সে অনুযায়ী আমল করেছে কিনা ?
বিশ্ব বাসীকে লক্ষ্য করে রাসূল (সা:) এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রথম ফরমান- “পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন।” এই আয়াতের তাৎপর্য হলো রবকে জানা বা বোঝার উদ্দ্যেশ্য পড়তে হবে, অন্য কথায় দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মহানবী (সা:) বলেছেন: “মুসলমান প্রতিটি নরনারীর উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ”
স্রষ্টা-সৃষ্টি ও বিশ্ব জাহান সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই প্রতিটি লোক তার নিজের এবং স্রষ্টার সম্বন্ধে জানতে ও বুঝতে পারে এবং সেই সাথে আরও বুঝতে পারে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক কি আর তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? এমনিভাবে মানুষ যখন তার স্রষ্ট্রাকে জানতে ও বুঝতে পারে তখন স্রষ্টার দেওয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন তার জন্য সহজ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন “আল্লাহ ঈমানদারের বন্ধু। তিনি মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে পথ দেখান।”তবে আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হবে তাগুতকে অস্বীকার করে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, ঢাকা মহানগরী উত্তর
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন