আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন আস্সালাতু আসসালামু আলা-সায়্যিদিল মুরসালিন। ওয়া আলা আলিহি ওয়া আস্হাবিহি আজমাইন।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের যে শ্রেণি বিন্যাস, সম্মান ও মর্যাদা নিরূপনের যে মাপকাঠি তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই। পৃথিবীর ইতিহাস মানুষকে যে শ্রেণিবিন্যাস করেছে, শ্রমিক-মালিক, ধনী-গরিব হিসেবে এটির কোন মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার কাছে নেই। এটিকে আল্লাহ তায়ালা মোটেও গুরুত্ব দেন না। তিনি কে শ্রমিক আর কে মালিক, কে ধনী আর কে গরিব এর ভিত্তিতে মর্যাদা নিরূপন করেন না। আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা মন খারাপ করেন যে, আমাদেরকে শুধু খাটায়, সমাজে আমাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না। মালিকদের পক্ষ থেকে এমন আচরণ আমাদের সাথে করা হয় যেনো আমরা মানুষ না। আল্লাহ তায়ালার ঘোষনা হলো “আমি নিশ্চিয়ই বনি আদমকে সম্মানিত করেছি।” আর আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি তিনি ওহি দিয়ে আমাদের কাছে পরিষ্কার করেছেন “তোমাদের মধ্যে যে অধিক পরহেজগার সে-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।” (সুরা হুজরাত-১৩)। শ্রমজীবী বন্ধুদের জন্য কোরআনের আয়াতগুলো হলো প্রশান্তির জায়গা। এজন্য আমি বলে থাকি কাল কেয়ামতের কঠিন সময়ে জান্নাতের দিকে ছুটে চলার পথে মালিকরা পিছিয়ে পড়বে। শ্রমিকরা এগিয়ে যাবে মালিকরা তাকিয়ে দেখবে যার প্রতি তারা অমানবিক আচরণ করেছিলো, যাকে কোন মর্যাদা দিতো না, আজ সেই শ্রমিকরা আল্লাহর কাছে প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী এবং চির প্রশান্তির জান্নাত লাভ করতে চলেছে। নিশ্চয়ই সেদিন মালিকরা আপসোস করবে। তারা বলবে আমরা কি করেছি দুনিয়াতে?
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এটি ইসলামী আন্দোলনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এটি ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম ক্ষেত্র, অন্যতম প্রধান ময়দান। এই ময়দানে আপনারা যারা মূল দায়িত্ব পালন করছেন। আমি তাদের সামনে ইসলামী সংগঠনের পরিচয়, ইসলামী সংগঠনের মডেল কি? এ বিষয়ে সামান্য কথা উপস্থাপন করতে চাই।
ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হলো সংগঠন। সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যতীত কোন আন্দোলন বিশেষ করে কোন আদর্শিক আন্দোলন কখনো সাফল্যের মুখ দেখতে পারে না। এই সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন “আল্লাহ সেই সব লোকদের ভালবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসা গলিয়ে ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল।” (আস-সফ: ৪)। ইসলামী সংগঠনের মডেল হচ্ছে রাসুলে করিম (সা.) প্রতিষ্ঠিত এবং খোলাফায়ে রাশেদিন পরিচালিত ইসলামী জামায়াত “আল-জামায়াত”। আল্লাহর রাসুলের পরিচালিত সংগঠনের ভিতরে আমরা মৌলিক তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। আমরাও সেই সংগঠন পরিচালনা করছি বিধায় আমাদেরও সংগঠন পরিচালনায় সেই তিনটি বৈশিষ্ট্য কে অবশ্যই ধারণ করা প্রয়োজন।
সেই তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:
১. চিন্তা ও আকিদার পরিশুদ্ধি:
রাসুল (সা.) তাঁর সংগঠনে যে মানুষগুলোকে সংগঠনভুক্ত করেছিলেন, তাদের চিন্তা ও আকিদার পরিশুদ্ধি করেছেন। সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রথমে ফুটে উঠে যে, চিন্তার বিভ্রান্তির জগত ও জাহেলি আকিদা থেকে সংগঠনভুক্ত মানুষগুলোকে সঠিক আকিদায় এবং পরিশুদ্ধ চিন্তায় নিয়ে আসার জন্য আল্লাহর রাসুলের (সা.) নানা ধরনের তৎপরতা ও কর্মসূচি ছিল। কেননা চিন্তা ও আকিদার বিভ্রান্তি একটি আদর্শিক আন্দোলনের সফলতার পথে সবচেয়ে বড়ো বাধা।
২. নৈতিক এবং চারিত্রিক মজবুতি সৃষ্টি:
রসুলল্লাহ (সা.) এর সংগঠনে যারা এসেছিলেন এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এই মানুষগুলো শুধু চিন্তার পরিশুদ্ধি নয়, আকিদার পরিশুদ্ধি নয় পাশাপাশি নৈতিক এবং চারিত্রিক মান তাদের এমনভাবে তিনি তৈরি করেছিলেন যে, গোটা জাহেলিয়াতকে নৈতিক এবং চারিত্রিক মান দিয়ে তাঁর সঙ্গী-সাথীরা পরাভ‚ত করেছিলেন। নৈতিক ও চারিত্রিক শক্তি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূল পুঁজি। ইসলামী আন্দোলন কখনো বাহ্যিকতা বা প্রদর্শনী দিয়ে সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যদি তার আভ্যন্তরীণ শক্তি, তার রুহানি শক্তি যথার্থ মানে না পৌঁছায়।
৩. ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সামষ্টিক পরিবেশ:
রসুলল্লাহ (সা.) এর সংগঠনের সামষ্টিক পরিবেশ ছিলো ভ্রাতৃত্বপূর্ণ। সামষ্টিক ও আভ্যন্তরীণ পরিবেশ এমন ছিল যেনো কোরআনের বাস্তব চিত্র। “মুহাম্মাদ আল্লাহর রসুল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ।” (আল-ফাতাহ্:২৯)। এককথায় তাঁর পরিচালিত সংগঠনের সামষ্টিক এবং আভ্যন্তরীণ পরিবেশ এমন ছিলো যা কোরআনে বর্ণিত জান্নাতি পরিবেশেরই যেন বাস্তব নমুনা। আমরা যারা সংগঠন পরিচালনা করছি আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি যে, আমাদের সংগঠনে এই বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করছি কিনা। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে আমরা সংগঠন পরিচালনা করতে পারছি কিনা। সংগঠন পরিচালনা এটি একটি শিল্প। এটি একটি আর্ট।
সংগঠন পরিচালনায় দুটো অবস্থা লক্ষ্য করা যায় একটি হলো নিজের মতো করে সংগঠনের কাজ করা। আর একটি দিক হলো সংগঠন পদ্ধতির আলোকে রাসুল (সা.) পরিচালিত সংগঠনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সংগঠনকে তার লক্ষ্য অনুসারী রেখে পরিচালনা করা। এ দুইয়ের মাঝে কিন্তু বিরাট তফাৎ রয়েছে। এখানে আরেকটি প্র্যাক্টিক্যাল দিক হচ্ছে সংগঠন পরিচালনায় আপনি যাদেরকে নিয়ে কাজ করেন দেখা যায় যে, তাদের অনেকে আপনার উপর বিরক্ত হয়ে যায়। আপনি আপনার সহকর্মীদের কে সন্তষ্ট রেখে সংগঠন পরিচালনা করতে পারেন না। আবার এমন দায়িত্বশীল আছেন যারা তাদের সহকর্মীদের সন্তষ্ট রেখে সংগঠন পরিচালনা করেন। কোন কোন দায়িত্বশীলকে আনুগত্য কর্মীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে হয়। আবার কোন কোন দায়িত্বশীলদের কাছে কর্মীরা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কাজ খোঁজে। আবার কোন কোন দায়িত্বশীল থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এই বাস্তবতাগুলোও আমাদের সাংগঠনিক জীবনে কম বেশি সকলেই জানি। এজন্য সংগঠন পরিচালনা এটি খুব ছোট বিষয় না। আমি যদি আমার মতো সংগঠন পরিচালনা করতে চাই তাহলে সেটা দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল দিবে না। সংগঠনকে তার লক্ষ্যের উপর নিবদ্ধ রেখেই আমাকে পরিচালনা করতে হবে। এখানে অন্যকিছুর আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু এটি একটি ইসলামী সংগঠন। এর মাধ্যমে আমরা পরকালের সফলতা পেতে চাই।
সংগঠন সম্প্রসারনের জন্য আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই। এই শ্রম ময়দানে আমি কখনো সরাসরি শ্রমিক সংগঠনের সাথে কাজ করার সুযোগ পাইনি। এর পরেও আমরা এই অঙ্গন সম্পর্কে যতটুকু জানার চেষ্টা করি, দেখার চেষ্টা করি, কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি, এখান থেকে আমি পাঁচটি বিষয়ে সংগঠন স¤প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করতে পরামর্শ দিবো।
১.সর্ব পর্যায়ে জনশক্তির মাঝে দাওয়াতি চরিত্রকে শানিত করা:
সর্ব পর্যায়ে সকল জনশক্তির মাঝে দাওয়াতি চরিত্র তৈরি করতে হবে এবং দায়ী ইলাল্লাহর অনুভ‚তিকে আরও শানিত করার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সকল জনশক্তিকে ব্যক্তিগত টার্গেট ভিত্তিক এবং গ্রুপ ভিত্তিক দাওয়াতি কাজ বাড়ানো দরকার। যে ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা এবং সংগঠনের নির্দেশনা আছে। এক্ষেত্রে আমাদের জনশক্তির যথার্থ অনূভুতি আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। এটার উপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে আমরা যে মোটিভেশন চালাই কোরআনের ভাষায় “সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি অনুগত মুসলিমদের একজন।” (হামীম-আস-সাজদাহ: ৩৩)। এভাবে আমাদের মোটিভেশন আরও বাড়াতে হবে। দাওয়াতি কাজকে ব্যাপক করার মানে সংগঠনকে স¤প্রসারণ করা। নতুন নতুন জায়গায় পৌঁছানো।
২. জনসেবা ও সামাজিক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া:
সেবা ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা এবং দাওয়াতের এই সূত্র ধরে তাদেরকে আখেরাত কেন্দ্রীক জীবন যাপনে উৎসাহী করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রানের পথ প্রদর্শন করা। সমাজ সেবাকে এই অঙ্গনে বিশেষত আমরা যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়াঁয় পৌছে দিতে পারি, এটাকে যদি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করতে পারি, তাহলে সংগঠন স¤প্রসারণের কাজটি খুব দ্রæত এগিয়ে যাবে। সংগঠনের মেসেজটা সেবার মাধ্যমে খুব দ্রুত পৌঁছে যাবে।
৩. নতুন নতুন সেক্টর এবং এলাকায় সংগঠন গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া:
আমরা মনে করি যে শাখাটি দুর্বল সেটিকে আগে সক্রিয় করি। তারপর নতুন এলাকায় বা সেক্টরে সংগঠন কায়েম করবো। এটি ভুল ধারনা। আমাদের এই ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দুর্বলকে সক্রিয় করার জন্য কাজ করবো এবং একই সাথে নতুন নতুন এলাকায় কাজ সৃষ্টি এবং সংগঠনের নেটওয়ার্ক বিস্তার করবো।
৪. শ্রমিক অঙ্গনে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য অবস্থান তৈরি করা:
আমরা নির্বাচনকে যাতে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে না দেই। সংগঠন স¤প্রসারণের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এই নির্বাচনকে আমরা গ্রহণ করতে পারি। কেননা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনকে দ্রুত পরিচিত করে তোলা যায়।
৫. শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া ও সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখা:
শ্রমিদের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে ভূমিকা পালন ও নেতৃত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে সংগঠন ও নেতৃত্বের পরিচয় বৃদ্ধি পায় যা সংগঠন সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে।
সাংগঠনিক মজবুতি অর্জন
সাংগঠনিক মজবুতি মানে কি? সাংগঠনিক মজবুতি মানে হচ্ছে সংগঠনের প্রত্যাশিত অবস্থা, কাক্সিক্ষত মান, সক্রিয়তা, সংগঠনের মাঝে উৎপাদনশীলতা। এক কথায় প্রবাহমান একটি নদীর যে চরিত্র একটি মজবুত সংগঠনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেই প্রবাহমান নদীর মতো। সাংগঠনিক মজবুতির ক্ষেত্রগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। সাংগঠনিক মজবুতির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে।
১. সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
২. সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং পরিবেশ।
৩. বায়তুলমাল।
৪. সাংগঠনিক রিপোর্টিং।
৫. তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা।
দায়িত্বশীলদের ভূমিকা:
দায়িত্বশীল কারা? আল্লাহ তায়ালার মনোনীত খলিফারাই হলেন দায়িত্বশীল। কেননা আপনার উপর যে দায়িত্ব আছে সেটা আপনি চেয়ে নেননি। এ দায়িত্ব আপনার উপর এসেছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। দায়িত্ব যেহেতু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে তাই দায়িত্বশীলদের চূড়ান্ত জবাবদিহি আল্লাহর কাছেই করতে হবে এই অনুভূতি সার্বক্ষণিক জাগ্রত রাখা। এই অনুভূতি থেকেই আল্লাহর রাসুল (সা.) এর দায়িত্ব পালনের পেরেশানির চিত্র কুরআন এভাবে অঙ্কন করেছেন যে “লা আল্লাকা বা-খিউন নাফছাকা আল্লা-ইয়াকূনু মুমিনীন।” (সুরা-আস শুয়ারা: ৩)। যোগ্যতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। যোগ্যতা কোন ব্যক্তির বেশি থাকবে কোন ব্যক্তির কম থাকবে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে পেরেশানি, খুলুসিয়াত ও আন্তরিকতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীর অনুভূতি, তাঁরই সন্তুষ্টি একমাত্র কাম্য হতে হবে।
১. সরাসরি কোরআন হাদিস থেকে সংগঠন বুঝা:
সরাসরি কোরআন এবং সুন্নাহ্ থেকে আন্দোলন সংগঠন বুঝার ব্যাপারে গোটা জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তত্ত¡াবধান করা। এই জায়গায় জনশক্তির মাঝে আবেগের চেয়ে অধ্যয়নকে প্রাধান্য দেওয়া। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে আন্দোলন-সংগঠন বুঝলে জনশক্তি কোন্ পরিস্থিতিই হারিয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
২. আনুগত্যের পরিবেশ তৈরি করা:
আমরা আনুগত্যের পরিবেশ তৈরি করতে শুধু কর্মীদের ভূমিকা আশা করি। কিন্তু আনুগত্যের স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশ তৈরিতে দায়িত্বশীলদেরও ভ‚মিকা আছে এটা আমরা অনেক সময় ছোট করে দেখি। নেতৃত্ব এবং আনুগত্যের ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। আনুগত্যের পরিবেশ তৈরিতে দায়িত্বশীলদের যে ভূমিকা রাখা দরকার তা হলো:
•জনশক্তির সাথে বিনম্র আচরণ।
•জনশক্তির ভুলগুলোকে বড়ো করে না দেখে মাফ করে দেওয়া।
•জনশক্তির সুখে-দুঃখে সরাসরি অংশগ্রহণ করা।
•নির্দেশের সুরে কথা না বলে পরিবেশ তৈরি করে কাজ দেওয়া।
•জনশক্তিদের থেকে শ্রদ্ধার আশা না করে জনশক্তিকে শ্রদ্ধা করা।
৩. অনুকূল-প্রতিকূল উভয় পরিস্থিতিতে জনশক্তিকে সকল কাজে পারদর্শী করে তোলা।
৪. সাংগঠনিক প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া।
৫. ত্যাগ কুরবানির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখা।
৬. আমানতদারিতা-এটি নেতৃত্বের মর্যাদার গ্যারান্টি।
৭. দায়িত্বশীলদের হৃদয়গ্রাহী ভাষণ।
৮. দায়িত্বশীলদের সর্বদা আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়া।
উপসংহার:
আল্লাহর রাসুল (সা.) আন্দোলন, সংগঠন পরিচালনার জন্য সবসময় প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। অথচ তাঁর প্রস্তুতির কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাঁকে প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু এরপরেও তিনি দায়িত্ব পালনে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আমাদের সমস্যা হচ্ছে প্রস্তুতি কম গ্রহণ করে বেশি কাজ করতে চাই। আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রস্তুতি গ্রহণে রাতের শেষ অংশে আল্লাহর কাছে ধরনা দিতেন। আল্লাহ রাসুল সংগঠন পরিচালনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো সকল পরিস্থিতিতে, সকল অবস্থায় সবর করতেন। আল্লাহর কাছে ইল্ম ভিক্ষা চাইতেন, রাতের শেষ অংশে আল্লাহর কাছে দাঁড়িয়ে যাওয়া, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধৈর্য ধারণ করা এই সমস্ত গুণাবলী আল্লাহর রাসুলকে তাঁর সফল দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করেছে। পরিশেষে মনে রাখা উচিত কর্মীরা দায়িত্বশীলের নিকট তাদের কোন স্বার্থ পূরণ করে দেওয়ার আশা করেন না বরং কর্মীরা দায়িত্বশীলের জীবনে উচ্চ নৈতিকমান আশা করে, দায়িত্বশীলের জীবনে সাহাবিদের (রা.) জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে চায়। আল্লাহ আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে দৃঢ়কদমে এগিয়ে যাবার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগর।