• প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result
No Result
View All Result
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result

শ্রমিকের অধিকার প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

এডভোকেট আতিকুর রহমান

skalyanad by skalyanad
জুলাই ১৫, ২০২৩
in আর্কাইভ, গ্যালারি, ছবি, প্রবন্ধ/নিবন্ধ
0
শ্রমিকের অধিকার প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা শ্রমিক অধিকার দিবস। দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের রক্স্রোত স্মৃতি বিজড়িত। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের অবসান ঘটাবার সূতিকাগার বলা হয় এই দিবসটিকে। পৃথিবীর শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কাছে এ দিনটি একদিকে যেমন খুবই তাৎপর্যময় তেমনি অনেক বেশি আবেগ ও প্রেরণার। প্রায় দেড়শত বছর আগে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ দুর্বার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শ্রমজীবী মানুষের বিজয়ের ধারা। সেই বিজয়ের ধারায় উদ্ভাসিত বর্তমান বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ। কারণ এ দিনটির মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাজের প্রাথমিক স্বীকৃতি পেয়েছে। পহেলা মে এক দিনের আন্দোলনের ফসল নয় বরং দীর্ঘ সময় ধরে দাবি আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে কিছুটা প্রাপ্তি এবং স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে এই দিনে। কাজেই ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ শ্রমিকের মর্যাদা বৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক সংগঠন হিসেবে আইএলও প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকারসমূহ স্বীকৃতি লাভ করে। আইএলও শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ পর্যন্ত ১৮৩টি কনভেনশন প্রণয়ন করে। এর মধ্যে ৮টি কোর কনভেনশনসহ ৩৩টি কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া দেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী সরকার শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণে দায়বদ্ধ। বাংলাদেশ লেবার ফোর্সের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ মহিলা শ্রমিক। কিন্তু আমাদের দেশের শ্রমিকরা কতটুকু অধিকার পাচ্ছে, শ্রমিকদের কতটুকু কল্যাণ সাধিত হয়েছে আজ তা কঠিন এক প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বাস্তবে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার যেন কিতাবে আছে গোয়ালে নেই! বরাবরই এই দেশের দিনমজুর, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ বঞ্চিত ও শোষিত। প্রতিবছর শ্রমিক দিবস আসে আবার শ্রমিক দিবস চলে যায়। কিন্তু দেশের শ্রমিকদের ভাগ্য যেন আর খোলে না।

শ্রমিক দিবসের প্রেরণা থেকে বাংলাদেশ মোটেও পিছিয়ে নেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শ্রমিক দিবস পালিত হয়। ঐ বছর সদ্য স্বাধীন দেশে পয়লা মে সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। তারপর থেকে আজও পয়লা মে সরকারি ছুটির দিন বহাল আছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো এ দিবসকে নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে। রাষ্ট্রের সরকারি দল ও বিরোধী দলসহ বিভিন্ন সংগঠনও দিবসটি যথাযথ গুরুত্বসহকারে পালন করে থাকে। এদিন দেশের সকল প্রচার মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় শ্রমিকদের পক্ষে সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়।

প্রতিবছর শ্রমিক দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে শ্রমিকরা একদিকে যেমন তাদের অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণ করে তেমনি স্বপ্ন দেখে তাদের অধিকারের ষোলআনা প্রাপ্তির। কিন্তু আজও বাংলাদেশের শ্রমিকদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশের শ্রমিকদের দিকে তাকালে আমরা আজও দেখতে পাই মালিক শ্রেণি কীভাবে তাদেরকে শোষণ করছে। মালিক শ্রেণির শোষণের ফলে অসহায়ের মতো শ্রমিকদেরকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এইতো মাত্র ১০ বছর পূর্বে ২০১৩ সনের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সাভারে রানা প্লাজায় শ্রমিকদের উপর স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসে প্রায় বার শতাধিক নিরীহ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু পুরো জাতিকে শোকাহত করে। ঘটনার দশ বছর পূর্ণ হলেও রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিখোঁজ ১০৫ জন শ্রমিকের সন্ধান আজও মিলেনি, এমনকি অনেকের কপালে ক্ষতিপূরণের অর্থও জোটেনি। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লেগে ১১১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যায়। ২০১০ সালে হামিম গার্মেন্টসসহ তিনটি গার্মেন্টসে দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিক প্রাণ হারায়। এভাবে প্রতিনিয়ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোয় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক নারী-পুরুষ-শিশু মারা যায়। দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক মারা যায়, তাদের পরিবারের রুটি-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখে।

আজকের এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছে না। যেখানে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের জন্য সেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলোতে এখনও ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ ঘণ্টা কাজ করানো হচ্ছে। বিনিময়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে নাম মাত্র। বেতন বৃদ্ধি কিংবা বকেয়া বেতন আদায়ের নিমিত্তে প্রতিনিয়তঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টে নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ করে যাচ্ছে। দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছরের ঈদুল ফিতরে দেশের ৪৯৩৩টি বড়ো ও মাঝারি কারখানার শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পাননি। এই সব কল-কারখানার মধ্যে রয়েছে পোশাক, ইস্পাত, ভারী লোহা, ভাঙা শিল্প, সিমেন্ট, তামাক ও সাবান ফ্যাক্টরী। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৬৩১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানার শ্রমিকরা ঈদে বেতন ও বোনাস পায়নি। এছাড়া বিকেএমইএ’র ৯৫টি, বিটিএমএ’র ২৪টি, বেপজার ১টি সহ ৮৮৮টি কল-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৩৯৯টি কারখানার মধ্যে বেতন ও বোনাস হয়নি ৩ হাজার ৬৯টির। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিকের ঈদ কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। কর্মরত কারখানার অনেক শ্রমিক ঈদের ছুটিতে যেতে পারেননি গ্রামের বাড়িতে। এভাবে মালিক পক্ষ হর-হামেশাই শ্রমিকদেরকে ঠকিয়ে যাচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই। মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পেটের দায়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চায়। এ নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় দ্বন্ধ দেখা দেয়। আমাদের দেশে শ্রমিকদের একটি বড়ো অংশ নারী। এসব নারীরা বিভিন্ন কল-কারখানা, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে বেশি কাজ করে থাকে। পোশাক শিল্পের বিকাশে এই দেশে নারী শ্রমিকের অবদান অনেক বেশি। কিন্তু যেই নারী শ্রমিকের অবদানে দেশের জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, সেই নারী শ্রমিকের চলমান জীবনযাপন বড়োই দুর্বিষহ।

কাজের ক্ষেত্রে পোশাক শ্রমিকের পর নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যাদের রক্ত ও ঘাম মিশে আছে তারাও তাদের শ্রমের ন্যায্য পাওনা অনেক সময় পায় না। শ্রম দিয়ে যারা শ্রমের মূল্য পায় না তারাই জানে জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই কত কষ্টের? বাংলাদেশের গৃহ কর্মীরাও কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। গৃহকর্মীর শরীরে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পিট ঝলসিয়ে দেওয়া এবং নানাবিধ নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। শুধু তাই নয় গৃহকর্মীরা বর্বর নির্যাতনের পাশাপাশি খুন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকাংশ কৃষি কাজ ও কৃষি পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করলেও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী, কালোবাজারী ও সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে অহরহ বঞ্চিত হচ্ছে। এর সাথে দফায় দফায় সার, বীজ ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমনিভাবে পরিবহন সেক্টরে কর্মরত প্রায় ৫০ লক্ষাধিক শ্রমিক প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণের সেবা প্রদান করলেও তাদের মজুরি নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নীতিমালা আজও প্রণয়ন করা হয়নি। লাখ লাখ রিকশা শ্রমিক প্রতিনিয়ত তাদের জীবন পরিচালনায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। এ শ্রেণির শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে রেশনিং, চিকিৎসা সেবা ও সন্তানদের শিক্ষা অধিকার আজও নিশ্চিত হয়নি।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণে তারা শারীরিক-মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এসব শিশু স্নেহ-ভালোবাসার অভাবে এক সময় অপরাধ জগতে পা বাড়ায়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ২৩-২৫ ধারা, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অবাধ সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বলা হলেও ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নানান ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকরা পাচ্ছে না। বিশেষ করে পোশাক শিল্পসহ প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা মালিকপক্ষের নানাবিধ কূটকৌশলের কারণে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা তাদের কিছু অধিকার অর্জন করলেও সকল দিক থেকে শ্রমিকরা তাদের অধিকার পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। প্রতি বছর শ্রমিক দিবস ঘটা করে পালন হলেও শ্রমিকরা আজও অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার। আজও তারা তাদের কাক্সিক্ষত মজুরি নিশ্চিত করতে পারেনি। কর্মক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা শ্রমের নিয়ম হয়তো বা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু থামেনি শ্রমিক নিপীড়ন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য। যে অধিকারের জন্য শ্রমিকরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শিকাগোর রাজপথে, তা বাস্তবে এখনও অর্জিত হয়নি। আজও শ্রমিকেরা পায়নি তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পায়নি ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি কাঠামো এবং স্বাভাবিক ও কাক্সিক্ষত জীবনের নিশ্চয়তা। মালিকের অসদাচরণ, কম শ্রমমূল্য প্রদান, অনুপযুক্ত কর্ম পরিবেশ প্রদানসহ নানা বৈষম্য শ্রমিকের দুর্দশা ও মানবেতর জীবনযাপনের কারণ হয়ে আছে।

আসলে আমরা শ্রম বা শ্রমিকের মর্যাদা বুঝেও বুঝতে চাই না। একজন মানুষের জীবনধারনের জন্য যা যা প্রয়োজন অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এসবই একজন শ্রমিকের প্রাপ্য। আর এটাই হচ্ছে শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা। একুশ শতকে এসে শ্রমিকরা এর কতটুকু মর্যাদা বা অধিকার ভোগ করছে? বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ শ্রমিকরা এ দেশের সম্পদ। তাদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। তাদের অবহেলার চোখে দেখার কোন সুযোগ নেই। তাদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকারের কথা বললেও শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আদৌ আন্তরিক হতে পারিনি।

কাজেই শ্রমিক দিবস কে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত অর্থে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শ্রমজীবী মানুষসহ সকল দায়িত্ববান নাগরিকদেরকে শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে নিম্নোক্ত দিক ও দাবিসমূহ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতিকে ঢেলে সাজানো, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মুনাফায় শ্রমিকদের অংশ প্রদান করা, জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী মজুরি নির্ধারন করা, শ্রমিকদের ন্যায় বিচার ত্বরান্বিত করার স্বার্থে শ্রমঘন এলাকায় শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা, শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, কল-কারখানায় ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মস্থলে আহত ও নিহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের পেশাগত ও নৈতিক ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা, নারী ও পুরুষের বেতন-ভাতার সমতা বিধান করা, কল-কারখানায় নারী শ্রমিকদের জন্য প্রসূতিকালীন ছুটি ও ভাতা প্রদানসহ সন্তানদের জন্য শিশু যত্মাগার স্থাপন করা, শিশু শ্রম বন্ধ করা, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করে সকল পেশায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা, সকল পেশার শ্রমিকদের শ্রম আইনের সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করা, কম মূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক কৃষকদের নিকট সরবরাহ করা এবং কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ, পুলিশী হয়রানি বন্ধ, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান এবং সরকারি উদ্যোগে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, রিকশা চালকদের হয়রানি বন্ধ করে বিভাগীয় শহরে রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, শ্রমিকের প্রতি মালিকের সহনশীল মনোভাব পোষণে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, শ্রমিকদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আলোকে কাজ দেওয়া, সঠিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বাস্তবতা হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী রাষ্ট্র দর্শনের কোনটাই শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদার ন্যূনতম সমাধান দিতে পারেনি। তারা মুখে শ্রমিক অধিকারের কথা বললেও বাস্তবে শ্রমিকদেরকে পুঁজি করে রাজনীতি করাসহ অগাধ অর্থ বৈভবের মালিক হয়েছে। ফলে এখনও শ্রমিক-মজুররা নিষ্পেষিত হচ্ছে। মূলতঃ ইসলামী শ্রমনীতি চালু এবং সৎ ও ন্যায়বান লোকদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা আসলে তারাই শ্রমিকের অধিকার আদায় ও রক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবে। তাছাড়া কোনোভাবেই শ্রমিক সমাজের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা আদায় সম্ভব হবে না। ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা হলে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতিকে ঢেলে সাজিয়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মানুষের মত বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ করা হবে। একজন মালিকের নিজের স্বজনরা যে রকম জীবনযাপন করবে তার অধীন শ্রমিকরাও সে রকম জীবনের নিশ্চয়তা পাবে। কাজেই শ্রমিক সমাজসহ দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীকে ইসলামী শ্রমনীতি চালু ও বাস্তবায়নের নিমিত্তে সৎ ও ন্যায়বান লোকদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা আনয়নে প্রচেষ্টা চালানো জরুরি। আসুন আমরা সবাই মিলে শ্রমজীবী মানুষের সত্যিকার মুক্তি অর্জনে যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। নির্যাতিত-নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

Previous Post

কুরবানির ঈদ উৎসব এবং মানবিক সমাজ

Next Post

প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব হয়নি : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

Next Post
প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব হয়নি : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমবান্ধব হয়নি : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

সর্বশেষ সংযোজন

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

by skalyanad
এপ্রিল ১৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী ভাইবোনদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে। আসন্ন...

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

by skalyanad
এপ্রিল ৮, ২০২৪
0

দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষ, দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।...

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

by skalyanad
মার্চ ২৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষরা সর্বক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত। তাদের অধিকার আদায়ের...

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৭, ২০২৪
0

আসন্ন ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য রাষ্ট্র ও মালিকদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার...

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৬, ২০২৪
0

এদেশের শ্রমজীবী মানুষের সস্ত্রশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ শ্রমজীবী মানুষরা পায়নি। রাজনৈতিক বিভেদ স্বাধীনতাকে...

  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
  • সাংগঠনিক কাঠামো
  • শাখা সংগঠন
  • ট্রেড ইউনিয়ন
  • সংবাদ
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
  • প্রকাশনা
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
  • যোগাযোগ

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.

Design and Developed by Bijoylab IT| Contact:+01818 650864
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.