• প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result
No Result
View All Result
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result

বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ঈদ আনন্দ ও বাস্তবতা

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ

skalyanad by skalyanad
জুলাই ১৫, ২০২৩
in আর্কাইভ, গ্যালারি, ছবি, প্রবন্ধ/নিবন্ধ
0
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ঈদ আনন্দ ও বাস্তবতা
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

ঈদের খুশি মানেই অন্যরকম আনন্দ। অন্যরকম এক ঢেউ। এই ঢেউয়ে সকল মানুষের মনই সিক্ত হতে চায়। সকলেই চায় ঈদফুলের নির্মল সুবাসে পরিবার-পরিজনকে সুবাসিত করতে। পবিত্রতার ছোঁয়ায় জীবন-সংসারকে কালিমামুক্ত করতে। জীবনের সমস্ত কষ্ট-গ্লানী মুছে ফেলতে। আলোকিত ভোরে নতুন সকালের সৌরভ মাখতে। কিন্তু চাইলেই যেনো সকল কিছু হয়ে ওঠে না। কষ্টের পাথরগুলো সরতে চায়না কারো কারো বুক থেকে। তবুও হতাশার দিকে পা বাড়াতে নেই। সম্ভাবনার প্রতাশায় পা বাড়াতে হয় প্রতিনিয়ত। সেই সম্ভাবনাময় যাত্রার মধ্যেই সুখের পুষ্পকলি মুখ লুকিয়ে আছে। সম্ভাবনার সেই কুসুমিত সকালের প্রত্যাশায় প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বুনে চলেন শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। তুরস্ক এবং গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্থ সিরিয়ার ভ‚মিকম্প, ফিলিস্তিনে ইহুদীদের বর্বরোচিত হত্যাকাÐ, মিয়ানমারের মুসলিম হত্যাকাণ্ড, স্বাধীনতাকামী কাশ্মীর-ঝিনজিয়াং-মিন্দানাওয়ার মুসলিম নির্যাতন পুরো মুসলিম বিশ্বের ঈদ আনন্দকে বেদনাবিধুর করেছে। তবুও স্বপ্ন দিনের আলোর। স্বপ্ন দেখি ভালোর। স্বপ্ন দেখি অমিত সম্ভাবনার।

বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও পোশাকশিল্পীদের ঈদ
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের অন্যতম বৃহত্তম ক্ষেত্র পোশাকশিল্প। সবাইকে সুন্দর সুন্দর সাজে সুসজ্জিত করলেও তাদের বুকের মধ্যে করুণ কাহিনীর অনেক অধ্যায় লুকিয়ে আছে। বেশিদিন আগের কথা নয়। গতবছরেই দেখেছি। পত্রিকার পাতায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে নিউজটি। ২০২২ সালের ৩ মে ঢাকা টাইমস এ প্রকাশিত ‘ঈদের আনন্দ ছুঁতে পারেনি তাদের, চোখ ভিজল কান্নায়’ শিরোনামে শ্রমিকদের করুণ চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। সারাদেশে যখন ঈদের আনন্দে মেতেছে সবাই, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছেন নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডের কয়েকশত শ্রমিক। তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করেই পালিয়েছেন মালিক। বেশ কয়েক দিন ইপিজেড, শিল্প পুলিশ, বিকেএমইএ’র কাছে ধরনা দিয়েও সমাধান না পেয়ে ঈদের দিন সড়কে অনশনে বসেছেন শ্রমিকরা। ঈদের আনন্দ ছুঁতে পারেনি তাদের। বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে যখন শ্রমিকরা অনশনে বসেন, তখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। পাওনা পরিশোধের আকুতি জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় নারী শ্রমিক নূর জাহানের চোখের আর বৃষ্টির পানি আলাদা করা যাচ্ছিল না।

অনশনে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক নূর জাহান। স্কুলপড়ুয়া দুই কিশোরী কন্যার সাথে বরিশালের ঝালকাঠির গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটি কাটানোর কথা ছিল তার। নতুন পোশাক নিয়ে মা আসবেন এই অপেক্ষায় ছিল কন্যারাও। তা আর হয়নি। অসহায়ের মতো নূরজাহান সুদূর নারায়ণগঞ্জ শহরের সড়কে দাঁড়িয়ে আকুতি জানাচ্ছেন প্রাপ্য শ্রমের মজুরির। ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত এই নারীশ্রমিক আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত নয় বছর যাবত এই কারখানায় অমানুষিক পরিশ্রম করেছি। নিজের শ্রমের মজুরি পাইলাম না। বছরে উৎসবের একটা দিন মেয়েদের সাথে থাকতে পারলাম না। বারবার ফোন দিচ্ছে, কেটে দিচ্ছি। মেয়েদের কী বলব, কথা বলার ভাষা আমার কাছে নেই। বাবাহারা মেয়েগুলো। আমি মা হয়ে ঈদে তাদের কিছু দিতে পারছি না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়োচ্ছি।’

নূর জাহানের স্বামী সাইদুল ইসলামও সাত বছর কাজ করেছেন বেকা গার্মেন্টসে। ২০২১ সালের জুলাইতে চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। স্বামীর ন্যায্য পাওনাদি আজও বুঝে পাননি বলে জানান নূর জাহান। সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে নূর জাহান বলেন, ‘কেন আমি আমার প্রাপ্য টাকা পাব না? স্বামীর পাওনা টাকাও পাইনি। মেয়েদের সাথে ঈদ করার কথা ছিল। আর আমি এই ঢাকা শহরে এত দূরে রাজপথে আন্দোলনে।’ এই বলে গলা জড়িয়ে আসে তার। আর কথা বলতে পারেন না। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখের পানি।

গার্মেন্টসের স্যাম্পল বিভাগের শ্রমিক মুজাহিদ বেতন না পাওয়ায় টাকার অভাবে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের পড়াশোনা বন্ধের পথে। ৩ হাজার টাকা ধার করে ২৪ এপ্রিল শেষ তারিখে ছেলের ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। তবে পাওনাদারের টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারেননি। কারখানা মালিকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মুজাহিদ বলেন, ‘বলা নেই, কওয়া নেই নোটিশ ঝুলিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। চারবার কথা দিয়েও বেতন দেয়নি। ২০ তারিখ গেলাম, পে ¯িøপ দিয়ে বলল লাঞ্চের পরে বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু কোন বেতন নাই। পরে দেখলাম, বেপজার সিকিউরিটি ও শিল্প পুলিশ সেখানে উপস্থিত। বললো, গার্মেন্টস মালিক পালিয়েছে। ছেলেটার এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের শেষ তারিখ ছিল ২৪ এপ্রিল। ধার করে টাকা দিছি। সেই টাকা এখনও দিতে পারিনি। ঈদের খরচ করা তো দূরের কথা। কোথায় আজ প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রের সেনাপতিরা’।

অনশনে অংশ নেওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানান, রপ্তানিমুখী এই পোশাক কারখানাটিতে প্রায় এক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী কর্মরত। বিগত তিন মাস থেকে সকলের বেতন বন্ধ। ২০২২ সালের ২ এপ্রিল কারখানাও বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। প্রতিবাদে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা। এরপর চারবার তারিখ দিয়েও বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। ২০ এপ্রিল বেতন পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ ছিল। ওই দিনও কারখানায় গিয়ে বেতন ও বোনাস পাননি শ্রমিকরা। এদিকে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে না দিয়েই মালিক পালিয়ে যান। বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি, ইপিজেড, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশ, বিকেএমইএর কাছে ধরনা দিয়েও কোন সমাধান পাননি শ্রমিকরা।

শুধুমাত্র বেকা গার্মেন্টস নয়। শ্রমবাজারের অধিকাংশ প্রকল্পের অবস্থাই করুণ। মালিকপক্ষের এ ধরনের অমানবিক আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। মালিকপক্ষের সাথে কথা বললে তারাও কষ্টের কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন। মালিকপক্ষ বলছেন আরও বড়ো ধরনের অসহায়ত্বের কথা। করোনাকালীন যে লস হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক। রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কথাও বলছেন অনেক মালিকপক্ষ।

২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর প্রকাশিত শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকরা তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনও শ্রমিকদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদনে ১৩১টি দেশের পরিস্থিতি প্রকাশ করেছে মার্কিন শ্রম দপ্তর। এতে বলা হয়, নয়টি দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আর ৭৩টি দেশের মাঝারি অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। ৩৭ দেশের খুবই সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। আর নয়টি দেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জুড়েই তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। বিপজ্জনক এ খাতের শ্রমিক নির্যাতনের ব্যাপকতা ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর সামনে আসে। এরপর কিছু সংস্কার হলেও বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক শ্রম, আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গিয়ে কাজ করা, জোরপূর্বক ওভারটাইম করানো এবং ক্ষতিপূরণ আটকে রাখার মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সুপারভাইজারদের হাতে কর্মীরা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজ করছেন।

শিশু শ্রমিক এবং তাদের ঈদ আনন্দ
‘একটা ময়ূর নিয়ে যান, একটা প্লেন নিয়ে যান, একটা বেলুন নিয়ে যান’ ঈদের দিনে এভাবে রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে চিল্লায়ে গ্যাস বেলুন বিক্রি করছে একটি শিশু। বেলুন বিক্রেতা শিশুটি সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পরিবারে দুই ভাই আর বাবা-মা। তার বাবা চা বিক্রেতা। সে থাকার কথা তার পাড়া কিংবা মহল্লার খেলার সাথীদের সাথে। হৈ-হুল্লোড় আর উল্লাসে সারা বাড়ি দৌঁড়ে বেড়োনোর কথা। কিন্তু পেটের দায়ে তাকে ঈদের খুশিকে কুরবানি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৯ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে যায়। আর ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ শ্রম ও শিক্ষা, এ দুইয়ের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া অবৈধ কাজেও শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মাদক পাচার ও বিক্রি, জোরপূর্বক ভিক্ষা ও যৌনকর্মীর মতো কাজগুলোয় শিশুদের যুক্ত করা হয়। শিশু শ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ সেই সনদের ১৩৮ নম্বর ধারাটি গ্রহণ করেছে। তবুও হয়রানি থেকে মুক্ত হয়নি শ্রমিক সমাজ। এখনও শিশুরা যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইটভাটা, তামাক, ট্যানারী, শুঁটকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে আমাদের শিশুরা।

অনেক পথশিশু কাগজ কুড়িয়ে আর বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করে ঈদের দিন পার করে। ঈদের আনন্দ-খুশি তাদের নাগালের বাইরে থাকে। নতুন জামা-কাপড় পরা, বিনোদন কিংবা আনন্দে মেতে ওঠা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা চিড়িয়াখানা-শিশুপার্কসহ বিভিন্ন শিশুবিনোদন কেন্দ্রে যায় আনন্দ উপভোগের জন্য নয় বরং নিজেদের বাঁচার তাগিদে, জীবিকার সন্ধানে। অবশ্য বিত্তশালীদের দয়া-অনুগ্রহে কিছুসংখ্যক দরিদ্র মানুষ নতুন পোশাক পরে ও উন্নতমানের খাবার খেয়ে ঈদের উৎসব পালন করে। এতে ধনীর পাশাপাশি কিছুসংখ্যক দরিদ্রের ঘরেও ঈদের আনন্দ প্রবাহিত হয়ে থাকে।

চা শ্রমিকের ঈদ
আমাদের নিত্যদিনের পানীয় হিসেবে চা এখন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। চা গাছের ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’ থেকেই আমরা পাই সুপেয় চা। বাংলাদেশে এক সময় শুধু বৃহত্তর সিলেট জেলাতেই চা বাগান ছিল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে চায়ের রাজ্য বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৬২টিও বেশি চা বাগান রয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৯০টি মৌলভীবাজার জেলায়, ২৩টি হবিগঞ্জ, ১৮টি সিলেট, ২১টি চট্টগ্রাম এবং বাকি ৯টি পঞ্চগড় জেলায়। চা শ্রমিকের কষ্টের রং ক্রমশ মিশে যাচ্ছে চায়ের লাল রঙের সাথে। বেতন-ভাতার কিংবা মজুরির হিসেব দেখলে অবাক লাগে। নিত্যদিনের খরচ-খরচায় জীবন-জীবিকা চালানো বড়োই কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদের খুশি তাদের কষ্টের রক্তাক্ত বর্ণের মতো।

জীবনযুদ্ধ ও ঈদ আনন্দে হোটেল শ্রমিক
সমাজে হোটেল শ্রমিকরা এখনো অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি। অধিকাংশ হোটেল শ্রমিককে তাদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না। সবেতনে কোনো ছুটি নেই। এমনকি সাপ্তাহিক কিংবা উৎসব ছুটিও নেই। কারও কখনো ছুটির প্রয়োজন হলে অন্য আরেক জনকে বদলি দিতে হয় অথবা বিনা বেতনে ছুটি পাওয়া যায়। নিয়মিত ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয় কিন্তু কোন ওভারটাইম ভাতা পাওয়া যায় না। মালিকের ইচ্ছার উপর তাদের চাকরির স্থায়িত্ব নির্ভর করে। মৌখিক আদেশেই শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। ১৭-১৮ বছর চাকরি করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হয় না। তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। প্রতিকারের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করলে মালিক ভুক্তভোগী শ্রমিককে তার কর্মচারী হিসাবেই স্বীকার করে না। যেহেতু হোটেল শ্রমিকরা নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র পায় না, শ্রমিকের পক্ষেও নিয়োগকর্তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপর শ্রম আদালতে বিচারক শূন্যতা, মামলার জট, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা তো আছেই। ঈদের দিন সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। সবাই নতুন জামা কাপড় পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ হোটেল শ্রমিকের ঘরে ঈদের আনন্দ থাকে না। সন্তানদের গায়ে ঈদের নতুন জামা থাকে না। অনেকে স্ত্রী সন্তানদের সামনে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারে না। যেন জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক।

রিপোর্ট অন মনিটরিং অফ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভে (এমইএস) ২০০৯, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১, জুন প্রকাশিত নানা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে হোটেল রেস্তোরাঁ ও দোকানে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮২ লাখ। এর মধ্যে শুধু হোটেল শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ হোটেল শ্রমিক রোজার মাসে চাকরি হারায়। এটি ২০০৯ সালের রিপোর্ট। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের সকল শ্রমিক এবং মালিকদের জন্য একটি শ্রম আইন আছে। মালিক এবং শ্রমিক প্রত্যেকেই এই আইন মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু হোটেল শ্রমিকরা যেন শ্রমিকই নয়। হোটেল মালিকরা যেন সকল আইনের ঊর্ধ্বে ফলে এখানে মালিকরা শ্রম আইনের কোন তোয়াক্কাই করে না।

পাথর শ্রমিকের জীবন ও ঈদ আনন্দ
বাংলাদেশে সবচেয়ে অনালোচিত সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের অন্যতম পাথর শ্রমিক শ্রেণি। সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ সারাদেশে পাথরশিল্পের সাথে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক যুক্ত আছেন। শুধুমাত্র লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বুড়িমারী, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট এবং রৌমারী উপজেলার তুবা স্থলবন্দরে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজ করেন। বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর শ্রমিক আছেন ২৫ হাজার, সোনাহাট স্থলবন্দরে ৮ হাজার এবং তুবা স্থলবন্দরে ৭ হাজার। পাথরভাঙা শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ শতাংশই নারী। ৩ স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় ৩ হাজার পাথর ভাঙা মেশিন আছে। প্রতিটি মেশিনে ১২-১৮ জন শ্রমিক পাথর ভাঙেন।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত এই কাজ করে একজন মজুরি পান ৩০০-৩৫০ টাকা। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই কম মজুরিতেই পাথর ভাঙার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকেন। তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত তবুও কাজ হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিক পয়তাল্লিশ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লাগাতার পাথর ভাঙার কাজ করি। শুধু দুপুরে ১ ঘণ্টা সময় পাই খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য। প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরি পেলেও তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চালানো যায় না। নিয়মিত খাবারই জুটাতে পারি না। সেখানে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখাবো কেমন করে। আর ঈদ-পার্বণে ভালো কাপড়-চোপড় কিংবা ভালো খাবারের তো প্রশ্নই আসে না। কুড়িগ্রামের তুবা স্থলবন্দরের পাথর শ্রমিক আব্বাস আলী বলেন, প্রতিবাদ করলে আর কাজে নেওয়া হয় না। তাই কম মজুরি পেলেও প্রতিবাদ করি না।

ঈদের খুশিতে কৃষকের ঘাম
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কৃষকের শ্রম। সারাবছর অবর্ণনীয় পরিশ্রমে তারা ফসল ফলায়, আমাদের আহার জোগায়। কিন্তু তাদের কোনো ভয়েস নেই, কোনো সংগঠন নেই, গণমাধ্যমে তারা উপেক্ষিত, রাজনীতিবিদদের কাছে তারা অবহেলিত। সেচের পানি না পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হয়। তাদের খবর নেবার কেউ নেই। মিডিয়াতেও তাদের কোনো খবর নেই। মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদে ঠাঁই পেতে তাদের মরতে হয়, নয় তাদের বাঁধ ভাঙতে হয়, নয়তো বন্যায় ভেসে যেতে হয়। নদী ভাঙার মতো কষ্ট পেলে তখন তারা নিউজে আসেন। তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। প্রত্যেকবার ভরা মৌসুমে ধান, পাট, আলু, পেঁয়াজ, সবজির দাম এতটা কমে যায়; কৃষকের খরচের টাকাই ওঠে না, শ্রমের দাম তো অনেক পরের কথা। তাদের ঈদ মানেই কষ্টের গান। পুরাতন কাপড় পরিষ্কার করে ঈদগাহে ছুটে যাওয়া।

প্রবাসীর ঈদে গোপন অশ্রু
বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নিঃস্বার্থ যোদ্ধা প্রবাসী শ্রমিকেরা। বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সবাই রেমিট্যান্স যোদ্ধা নন। আমাদের মতো শিক্ষিত যারা নানা কারণে, নানা কৌশলে যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হন; তারা রেমিট্যান্স তো পাঠানই না; উল্টো দেশে থাকা সব সম্পত্তি বিক্রি করা টাকা পাচার করে নিয়ে যান নিজের ‘স্বপ্নের দেশে’। সেখানেই বাড়ি কেনেন, গাড়ি কেনেন, ভবিষ্যতের জীবন গড়েন। কালেভদ্রে তারা দেশে আসেন বেড়োতে। বিমানবন্দরে তাদের আলাদা সম্মান। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তো বটেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা অকল্পনীয় কষ্টে অর্থ উপার্জন করেন। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে থেকে উপার্জনের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন। দেশে বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের জন্য তাদের প্রাণ কাঁদে। ঈদের মজার দিনগুলোতে তাদের প্রাণ কাঁদে। কিন্তু খরচের ভয়ে দেশে ফিরতে পারেন না। অনেকে একেবারে দেশে ফেরেন। অনেকে ২/৩ বছর পর ফেরেন অনেক আশা নিয়ে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে। বিমানবন্দরে তাদের সাথে ভালো আচরণটুকুও ভাগ্যে জোটে না।

গরিব-মেহনতি মানুষের ঈদ
গরিবরা পরিশ্রম করে। গোটা দেশটা টিকে আছে গরিব মানুষের পরিশ্রমের ওপরই। মাঠে ফসল ফলাচ্ছে, দেশের সব মানুষকে খাইয়ে-বাঁচিয়ে রাখছে গরিব মানুষ। তারাই একমাত্র শ্রম প্রদান করে থাকে। অথচ এই মেহনতকারীদের ঘরে খাবার নেই। কারখানায় যত প্রকার দ্রব্য-সামগ্রী প্রস্তুত হয় সব তৈরি করেও গরিব মানুষ। অত্যধিক শ্রমের পরও মেহনতকারীদের ঘরে সারা বছরই অভাব লেগে আছে। রাস্তা বানাচ্ছে, বাড়ি বানাচ্ছে, কাপড় বানাচ্ছে, সমাজের অগ্রগতির চাকাকে সচল রেখেছে গরিব মানুষ। রিকশা চালায়, ট্রাক, বাস, ট্রেন, লঞ্চ চালায়। এক কথায় এই সমাজটাই টিকে আছে গরিব মানুষের পরিশ্রমের ওপর।

চা-পানের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ী, ব্যক্তি পরিচালিত ছোটোখাটো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, বাসা-বাড়িতে কাজ করা খালা বা বুয়া, পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যারা শ্রমবিনিয়োগ করে জীবন-জীবীকা নির্বাহের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তাদের ভাগ্যের চাকা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে না। ঈদের খুশিও তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। ঈদের দিনেও শ্রমিকদের বহুমুখী কষ্টের সীমা থাকে না। বিভিন্ন ধরনের দুঃখজনক চিত্র চোখের সামনে ভেসে আসে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, আবাসন-চিকিৎসা ব্যয়সহ জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। ফলে মালিকের অর্থ হুহু করে বাড়ছে আর শ্রমিক ন্যায্য মজুরি না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। এতে করে শ্রমিকদের জীবনমানের মারাত্মক অবনতি হচ্ছে।

দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন গ্রামে ছুটে যান নাড়ির টানে। তখন বিত্তবান কিছুসংখ্যক মানুষ ঈদের আনন্দ করতে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে। ধনী-দরিদ্রের এ বৈষম্য ঈদ উৎসবের ঐক্য-ভ্রাতৃত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঈদের উৎসব উদযাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পেলেও দিনমজুর, কৃষক, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এসব ভাতা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অধিকন্তু অন্যান্য পেশার লোকজন কয়েক দিন ঈদের ছুটি ভোগ করতে পারলেও কৃষক-দিনমজুরদের কাজ করতে হয় উৎসবের দিনেও। এদিকে ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের ঈদ উৎসবকে ¤øান করে। এছাড়া বেতন-ভাতা না পাওয়া (নন-এমপিও) শিক্ষক এবং বেকার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের ঈদ উৎসবের আনন্দ উপভোগ অপূর্ণ থাকে। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার কারাগারে বন্দি এবং নিপীড়িত নেতাকর্মীদের পরিবারের ঈদ কাটে নিরানন্দে। এছাড়া হত্যা-খুন-গুম হওয়া পরিবারে ঈদ আনন্দের পরিবর্তে বেদনা নিয়ে আসে। প্রিয়জনদের অনুপস্থিতিতে ঈদের আনন্দ-উল্লাসে তাদের কষ্টের মাত্রা আরও বাড়ে। অধিকন্তু ঈদ পূর্বাপর দুর্ঘটনা ও সহিংসতায় নিহত-আহতদের পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। আর ঈদকেন্দ্রিক চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, প্রতারণা-জালিয়াতির ভুক্তভোগীদের ঈদ কাটে চরম দুঃখে।

পরিশ্রম করে বলেই আমরা তাদের শ্রমিক বলে থাকি। শ্রম বিক্রি করা অসম্মানের কাজ নয়। পরিশ্রম করেই তারা দেশটাকে টিকিয়ে রাখছে। সমাজের বিত্তশালী মানুষেরা প্রায়ই ক্ষেতমজুর, কৃষক, রিকশাচালক, কুলি বা এ ধরনের খেটে খাওয়া মানুষকে গালিগালাজ করে-তুচ্ছ জ্ঞান করে। অসম্মান ও নির্মম আচরণ করতেও দ্বিধা করে না। কেউ কেউ মনে করেন, বিত্তবান মানুষগুলো লেখাপড়া শিখেছে, তাই তাদের সম্মান করা কর্তব্য। শিক্ষিত লোকদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে তবে কিন্তু লুটেরা অসাধু তস্কর জাতীয় তথাকথিত শিক্ষিত বিত্তবানদের সমীহ করে প্রতিবাদ বিমুখ হবার কোনো দরকার নেই। বড়ো অফিসার, বড়ো বড়ো উকিল, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, এসপি, সেক্রেটারি, কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার, জেনারেল, অধ্যাপক, লেখক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী প্রমুখ বড়োপদের ব্যক্তিগণ সততার পরিচয় দিলেই তাদের সম্মান করা জরুরি। তারা অসৎ ও শোষক হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শব্দ উচ্চারণ করা একান্ত জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে শ্রমিকের ঘামে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমে। কিন্তু যে শ্রমিকেরা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে সেই শ্রমিকেরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত। বর্তমান সমাজবাস্তবতার এই করুণ পরিণতি দেখেও সচেতন দেশবাসীও নিশ্চুপ। তরুণরাও বিচ্ছিন্নতা, হতাশা ও আত্মমুখীতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি অসংগতিকে সবাই একেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ধরে নিচ্ছে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের নেতৃত্বেও রাজনৈতিক আত্মীকরণের বাহন বানানো হয়েছে। বুদ্ধিজীবী শ্রেণিও নীরব ভ‚মিকা পালন করছেন এ সব বিষয়ে। গণমানুষের পক্ষে সময়োপযোগী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না তারাও। গান-কবিতা-কথাসাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বাস্তবধর্মী করে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতিকে আরও হতাশ করছে। রাজনৈতিক এ দুরাবস্থার কারণে পবিত্র ঈদের জাতীয় ঐক্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বস্তরের দুর্নীতি, রাস্তাঘাটের বেহালদশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের কারণে এমনিতেই সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ সীমিত হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অনৈক্যের কর্মসূচি ঈদের আনন্দকে আরও ¤øান করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ভাবতে হবে। ইসলামের সাম্য মৈত্রী এবং মানবিক মূল্যবোধের বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কল্যাণমুখি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি।

লেখক: কবি ও গবেষক; প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Previous Post

অনুপ্রেরণার বাতিঘর এডভোকেট শেখ আনসার আলী

Next Post

মাহে রমজানের ডাক

Next Post
মাহে রমজানের ডাক

মাহে রমজানের ডাক

সর্বশেষ সংযোজন

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

by skalyanad
এপ্রিল ১৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী ভাইবোনদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে। আসন্ন...

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

by skalyanad
এপ্রিল ৮, ২০২৪
0

দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষ, দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।...

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

by skalyanad
মার্চ ২৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষরা সর্বক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত। তাদের অধিকার আদায়ের...

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৭, ২০২৪
0

আসন্ন ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য রাষ্ট্র ও মালিকদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার...

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৬, ২০২৪
0

এদেশের শ্রমজীবী মানুষের সস্ত্রশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ শ্রমজীবী মানুষরা পায়নি। রাজনৈতিক বিভেদ স্বাধীনতাকে...

  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
  • সাংগঠনিক কাঠামো
  • শাখা সংগঠন
  • ট্রেড ইউনিয়ন
  • সংবাদ
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
  • প্রকাশনা
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
  • যোগাযোগ

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.

Design and Developed by Bijoylab IT| Contact:+01818 650864
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.