১
মানব সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ দিন-রাতের গণনা শুরু করে। এই গণনা হতো সূর্যের উদয় ও অস্তের ভিত্তিতে। অপর দিকে মাস গণনা করা হতো চাঁদের ওপর ভিত্তি করে। চাঁদের ছোট-বড়ো হওয়াকে কেন্দ্র করে মাস হিসাব করা হতো। ১২ চন্দ্র মাসকে এক বছর ধরা হতো। পৃথিবীর কোনো স্থানে চন্দের ভিত্তিতে আবার কোথাও সূর্যের ভিত্তিতে মাস গণনার প্রচলন শুরু হয়। যেখানে যেভাবেই গণনা করা হোক না; প্রতিটি গণনাতে বছরের শুরু ও শেষ আছে। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরের সূচনাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর দেশে দেশে নানা উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবকে সাধারণত নববর্ষ উদযাপন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সাধারণত প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে।
ষোল শতকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মুঘল সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতো। কিন্তু হিজরি পঞ্জিকার অনুসারে এদেশে ফসল ফলনের হিসাব মিলতো না; এতে বিপত্তি দেখা দেয়। এই বিপত্তি এড়ানোর জন্য সম্রাট আকবর তার দরবারের সভাসদ (নবরত্মের বাইরের) আমির ফতেউল্লাহ শিরাজী-এর পরামর্শক্রমে বাংলা সন চালু করেন। যেহেতু এই সন ফসল ফলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তাই প্রথম দিকে এর নাম ছিল,‘ফসলি সন’। পরবর্তীতে এই সনের ব্যাপক চর্চার কারণে এটি ‘বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ’ নাম ধারণ করে।
সম্রাট আকবরের সময় বাংলা সনের চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত কৃষকরা তাদের উৎপন্ন পণ্যের খাজনা জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীদের পরিশোধ করতো এবং পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ভূস্বামীরা কৃষকদের মিষ্টিমুখ করাতো। এই সময় সম্রাট আকবর ইরানের নববর্ষ অনুষ্ঠান ‘নওরোজ’ এর আদলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সূচনা করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকুল্য পেয়ে পহেলা বৈশাখ বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হতো। ইরানের নববর্ষ অনুষ্ঠান ‘নওরোজ’ এর অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল ‘মিনা বাজার’। মিনা বাজারের আদলে সম্রাট আকবর ‘বৈশাখী মেলা’ আয়োজনের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তাই কৃষকের ফসল বোনা কিংবা ফসল ঘরে তোলার সাথে আর্থসামাজিকতার একটি বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। কৃষক যখন মাঠে ফসল বপন করে, তখন সে শুধু বীজ বপন করে না। কাঁদা মাটিতে তাঁর নানা স্বপ্নও বপন করে। সে স্বপ্ন দেখে মৌসুম শেষে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে জীবনের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের। তাই প্রতি বছর ফসল বিক্রি করে কৃষকরা সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে।
এই সময় বাংলা নববর্ষ সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। সব বয়সী মানুষের প্রাণে প্রাণে আনন্দ-উল্লাস বয়ে যায়। বাংলা নববর্ষের প্রধান অনুুসঙ্গ বৈশাখী মেলা। গ্রামের হাট-বাজারে কিংবা বড়ো কোন মাঠে বসে বৈশাখী মেলা। মেলায় কৃষিজ পণ্য, কুটির শিল্প হতে শুরু করে মৃৎ, হস্ত শিল্প, কৃষকের প্রয়োজনীয় লাঙ্গল-জোয়াল, মই ও গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় নানা ধরনের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ে যায়। এসব মেলায় গ্রামীণ মানুষের তৈরি বাঁশের বেতের বিভিন্ন তৈজষপত্র, নারকেল মুড়কিসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুস্তির আসর বসে। এখনো কিছু কিছু মেলায় ষাড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, বলী খেলার আয়োজন করা হয়। মেলা থেকে মেয়েদের জন্য হাতের চুড়ি, কানের দুল, গলার হাড় কিনে নেন বাবারা। বাড়ির সকলের জন্য নানা মুখরোচক খাবার তথা জিলাপি, রসগোল্লা, বুড়িন্দা, কিনে নিয়ে যান তারা।
মুঘল আমলের খাজনা আদায়ের পদ্ধতি পরবর্তীতে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে ‘হালখাতা’ নামে একাকার হয়েছে। যেহেতু কৃষকদের ফসল বিক্রির পূর্বে হাতে নগদ অর্থ থাকে না; তাই তাদের দৈন্দদিন প্রয়োজন হতে শুরু করে নানাবিধ প্রয়োজন মিটাতে দোকানে বাকির খাতা খুলতে হয়। দোকানীর এই পাওনা তারা পরিশোধ করে ফসল বিক্রির মাধ্যমে। দোকানীরা এই সময় ‘শুভ হালখাতা’ নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রাহককে বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করে থাকে। এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
বাংলা নববর্ষ-এইভাবে আমাদের দেশে পালিত হয়ে আসছে। এবং এটিই আমাদের সংস্কৃতি।
২
সংস্কৃতি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে সমাজবিজ্ঞানী কার্লাইল বলেন, ‘মানবিক সত্ত্বার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য সাধনার নামই সংস্কৃতি’। সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন ই বি টাইলর। তার মতে সংস্কৃতি হলো, সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত আচার-আচরণ, দক্ষতা, জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, রীতি-নীতি, প্রথা, পদ্ধতি ও আইন কানুন ইত্যাদির জটিল রূপের নাম সংস্কৃতি। এক কথায় সংস্কৃতি হচ্ছে A way of life.
বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি এই দেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত সংস্কৃতি। তবে কথা থাকে যে, একই ভূখণ্ডে বসবাস করলেও স্ব স্ব ধর্মীয় দিক থেকে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। যেহেতু ধর্ম বিশ্বাস মানুষের জীবনের প্রধান অনুসঙ্গ তাই স্ব স্ব ধর্মের আলোকে সংস্কৃতি অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়।
বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির জাতীয় উৎসব। এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বীয় ধর্মের আলোকে এই উৎসব পালন করবে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে একশ্রেণির অপশক্তি সর্বজনীন উৎসবের নামে, বাংলা নববর্ষের উৎসবকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
দেশের নব্বইভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান তথা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এই ধর্ম বিশ্বাসের নিজস্ব শক্তিশালী সংস্কৃতি রয়েছে। এই সংস্কৃতি হলো ‘ইসলামী সংস্কৃতি’। কাজেই এ জাতির জাতীয় উৎসবে ইসলামী সংস্কৃতির বিশ্বাস ও আচারের প্রতিফলন ঘটার কথা। কিন্তু তথাকথিত সমাজের বুদ্ধিজীবীরা সুকৌশলে ইসলামী সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে বাংলা নববর্ষকে পৌত্তলিক ও পৌরাণিক ধর্ম বিশ্বাস মতে পালন করতে চায়। তারা হাজার বছরের সংস্কৃতির কথা বলে এই কাজ করে যাচ্ছে। এটি স্পষ্টত মিথ্যাচার। কেননা বাংলা সন চালু হয়েছে, এক হাজার বছর হয়নি। অপর দিকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রথা চালু হয় ১৯৬৭ সালে এবং শোভাযাত্রা চালু হয় ১৯৮৯ সালে।
এই সকল বুদ্ধিজীবীদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে, এই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা। বিশেষত যখন দেশের শতকরা নব্বইভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, তাদের বিভ্রান্ত ও ধর্মের পথ থেকে সরিয়ে আনার জন্য তারা তাদের সকল শক্তি নিয়োগ করেছে। তারা চায় এই দেশের মানুষ মূর্তিপূজারী হোক। এক আল্লাহর দাসত্ব ছেড়ে লক্ষ-কোটি ভগবানের দাসত্ব করুক (নাউজুবিল্লাহ)। এর মাধ্যমে তারা মূলত জাতির প্রাণশক্তি তথা সংস্কৃতির বিনাশ ঘটাতে চায়।
৩
এই অপশক্তি আমাদের সংস্কৃতির শিকড়ে বিষাক্ত থাবা বসিয়েছে। তাদের নানা ধরনের কৌশল ও রাষ্ট্র ক্ষমতাশীন বিভিন্ন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনায় তারা বিবিধ সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। যার যাত্রা শুরু হয় দেশভাগের আগেই। দেশ ভাগের পর ১৯৬১ সালে তারা ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করে। যার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিম সংস্কৃতি উৎপাটন কার্যক্রম। ছায়ানটের আদলে অসংখ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উৎসব পালনের নামে বিধর্মী সংস্কৃতি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যার বড়ো উদাহরণ বাংলা নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষ পালনের নামে তারা হিন্দু সংস্কৃতির অনুকরণে বরণ ডালা সাজিয়ে পৌরাণিকতা ও পৌত্তলিকতাকে আমাদের সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি জীবনে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। ছায়ানটের উদ্যোগে রাজধানীর রমনা পার্কে অশ্বত্থবৃক্ষের বেদীমূলে মাঙ্গলিক গান গাওয়ার যে সংস্কৃতি চালু করেছে, এটি ইসলাম সমর্থন করে না। অন্যদিকে এসব স্থানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হচ্ছে। যা স্পষ্টত হারাম। ছায়ানট তার দলবল নিয়ে পহেলা বৈশাখে অশ্বত্থবৃক্ষের বেদীমূলে ‘সূর্যদেবতার’ উদয়ের অপেক্ষায় থাকে। সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হলে ছায়ানটের শিল্পিরা তার কাছে নিখিল ও অখিলের কল্যাণ কামনায় গান গেয়ে ওঠে। এসব গান অধিকাংশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন এবং তার ধর্ম বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে। রবীন্দ্রনাথের বাইরে নজরুল ইসলামের দুই একটি গান তারা পরিবেশন করে, সে গানগুলো আবার শ্যামা সঙ্গীত। এমনকি অন্য কবিদের যেসব গান গাওয়া হয়, তারও উপজীব্য হিন্দু পুরাণ। কোন মুসলমান সূর্যকে দেবতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না এবং তার কাছে কল্যাণ কামনা করতে পারে না। ছায়ানট এই সত্যটুকু জানার পরও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার জন্য এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অন্যদিকে রমনা পার্কের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চারুকলা ইনস্টিটিউট মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। প্রথমত চারুকলায় যেসব বিষয় পড়ানো ও শিখানো হয়, তা ইসলাম সমর্থন করে না। দ্বিতীয়ত মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে তারা যে ভÐামি করে; এটিও আবহমান বাংলার সংস্কৃতি সমর্থন করে না। ১৯৮৫ সালের পূর্বে কোন বাংলা নববর্ষ এভাবে উদযাপিত হয়নি। মঙ্গল শোভাযাত্রা ছায়ানটের আদলে প্রতিষ্ঠিত চারুপীঠ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রচলন করে। তারই অনুকরণে ১৯৮৯ সালে চারুশিল্পী সংসদ ঢাকায় নববর্ষের দিন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে এদেশের সংস্কৃতিকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। মুসলমানদের পোশাক-পরিচ্ছেদ, দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবীকে টার্গেট করে মূর্তি তৈরি করা হয়। মঙ্গল কামনা করার জন্য হিন্দুদের মনসাপট, লক্ষীর সরা, বেদ এ বর্ণিত বিভিন্ন দেবদেবীর বাহন তথা পশুপাখির ডামি, পুরাণের নানা অসুর, রাক্ষস, ভূত-প্রেত, পেঁচা মুখোশ তৈরি করা হয়। নতুন বছরে সুফলা কামনা করে দেবী লক্ষ্মীর সরা তৈরি করা হয়। পড়ালেখার উন্নতির জন্য বিদ্যা দেবী সরস্বতীর বাহন হংস ও বীণা তৈরি করা হয়। অমঙ্গল থেকে দূরে থাকতে অমঙ্গলের দেবী মনসার পট তৈরি করে শোভাযাত্রায় রাখা হয়। এসব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজেদের অজান্তে মুসলমান তরুণ-তরুণীরা শিরকে জড়িয়ে পড়ছে। ছায়ানটের এমন কার্যক্রম দেখে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার মনে হয়েছে, ‘অষ্টমীর এক ডালা’। অর্থাৎ দুর্গা পূজায় অষ্টম তিথিতে দেবী দুর্গা বরণে সজ্জিত অষ্টমীর ডালা।
নব্বই শতাংশ মুসলমানের ধর্ম বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর তারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
৪
বাংলা নববর্ষের উপাচার হিসেবে হিন্দুদের সংস্কৃতি মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন নববর্ষের দিন মুসলমান তরুণীদের হিন্দু তরুণীদের মত পোশাক পরিধান করা। সিঁথিতে সিঁদুর পরা। হাতে শাখা পরা। তরুণরা শঙ্খ বাজায়। ধুতি পরা। তরুণ-তরুণীরা অবাধে হোলি (হিন্দুদের পূজা) খেলে। একে অপরের শরীরে রং লাগিয়ে দেয়। যা সমাজে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা সৃষ্টি করছে। শরীরের বিভিন্নস্থানে এমনকি স্পর্শকাতর স্থানে তিলক, স্বস্তিকা, টীকা, উল্কি আঁকে। প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা শুরু করলেও এটি এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ শরীরে উল্কি আঁকা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রাজধানীর রমনা পার্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তরুণ-তরুণীরা একে অপরের শরীর ছুঁয়ে উল্কি আঁকে। এটি অপসংস্কৃতি ও বেহায়াপনার চূড়ান্ত পর্যায়।
আল্লাহ তায়ালার দেওয়ার বিধি-বিধান পাশ কাটিয়ে নিজেদের মত করে জীবনযাপন করতে গেলে সমাজে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। আল্লাহ নারীর নিরাপত্তার জন্য পর্দার বিধান দিয়েছেন। তথাকথিত নারীবাদীরা চায়, নারী-পুরুষ ঘরে বাইরে সমানভাবে মেলামেশা করবে। নারী ও পুরুষের পর্দা বলতে কিছু থাকবে না। তাদের এই অব্যাহত চাওয়ার প্রেক্ষিতে জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণে অসংখ্য নারী তার সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলছে। প্রতি বছর নববর্ষের দিন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও তার আশে পাশের এলাকায় অসংখ্য নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। এই দিন তথাকথিত প্রেম ভালোবাসার নামে নারী তার পুরুষ বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়ে তার ইজ্জত হারিয়ে ফেলছে। কিছুদিন পরপর পত্রিকার পাতায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, বিয়ের দাবিতে অমুকের বাড়িতে তমুকের অনশন।
৫
ইসলাম স্থানীয় সংস্কৃতির বিরোধীতা করে না। কিন্তু তাই বলে সংস্কৃতির নামে অন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ, আচার-আচরণ যখন মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন এটি ইসলাম সমর্থন করে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে নববর্ষ পালিত হবে তাদের ধর্ম বিশ্বাস মতে। এতে মুসলমানদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
নববর্ষ পালন হারাম না হালাল; এটি নির্ধারিত হবে নববর্ষ কীভাবে পালিত হবে তার উপর ভিত্তি করে। যে সব কাজ বছরের অন্যদিন হারাম, সেই কাজ নববর্ষের দিন হালাল হতে পারে না।
বাংলা নববর্ষ যেমন আমরা ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের মত উদযাপন করতে পারি না। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের পাশর্^বর্তী কোন দেশের ধর্মীয় বিশ্বাস-মূল্যবোধের ন্যায় পালন করতে পারি না। আমাদের নববর্ষ আমাদের মত করে পালন করতে হবে। যেখানে আমার ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রাধান্য পাবে। একই সাথে এই উদযাপন হবে শালীনতা বজায় রেখে। সমাজে কারো ক্ষতি করে কিংবা এমনভাবে পালন করা যাবে না পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হয়।
বাংলাদেশ অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমাদেরকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে। আমরা যেন কোন ভাবেই কোন একটি দেশের অঙ্গরাজ্যে স্বেচ্ছায় পরিণত না হই এটি সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। আমার সংস্কৃতি, আমার মাটি, আমি রক্ষা করবো-এই দীপ্ত শপথে আমাদের নববর্ষ পালিত হোক, এটি আজকের প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট