১. প্রশ্ন: এন্ট্রি ট্রেড ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন কী?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৯৬ (ক) ধারায় এন্ট্রি ট্রেড ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, শ্রমিক কর্তৃক ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া চলাকালে অথবা রেজিস্ট্রেশন দরখাস্ত অনিষ্পন্ন থাকাকালে অথবা রেজিস্ট্রেশনের পর মালিক কর্তৃক শ্রমিকের চাকরির শর্তাবলী লঙ্ঘন এবং কর্মস্থলে প্রতিশোধমূলক কোন কার্যক্রম গ্রহণ করলে তা উক্ত মালিকের পক্ষে এন্ট্রি ট্রেড ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন হবে।
২. প্রশ্ন: সিবিএ কী? কীভাবে সিবিএ গঠিত হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০২ ধারায় সিবিএ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সিবিএ এর পূর্ণরূপ হলো (ঈড়ষষবপঃরাব নধৎমধরহরহম ধমবহঃ) যার বাংলা অর্থ ‘যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি।’
কীভাবে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে; তা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২০২ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত ধারার ২ উপধারা মতে, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে একটি মাত্র ট্রেড ইউনিয়ন থাকে সেক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য তা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি বলে বিবেচিত হবে।
২০২ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী যেখানে কোন প্রতিষ্ঠান একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন থাকে সেক্ষেত্রে কোন ট্রেড ইউনিয়ন অথবা মালিক যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য দরখাস্ত করলে অনুরূপ দরখাস্ত দাখিলের একশত বিশ দিনের মধ্যে শ্রম পরিচালক গোপন ভোটের মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কোন ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হবে তা নির্ধারণের ব্যবস্থা করবেন।
৩. প্রশ্ন: অংশগ্রহণ কমিটি বলতে কী বুঝায়? কীভাবে অংশগ্রহণ কমিটি গঠিত হয়?
উত্তর: বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২০৫ ধারায় ওয়ার্কস কাউন্সিল বা পার্টিসিপেশন কমিটির গঠন ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। শ্রম পরিচালক অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিখিত আদেশ বলে যে প্রতিষ্ঠানে পঞ্চাশ অথবা ততোধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছে অথবা পূর্ববর্তী এক বছরের যে কোন সময় নিয়োজিত ছিল, সেখানে নির্ধারিত নিয়মে নিয়োগকারী এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে এমনভাবে ওয়ার্কস কাউন্সিল বা পার্টিসিপেশন কমিটি গঠন করবেন যেন শ্রমিকদের প্রতিনিধির সংখ্যা মালিকদের প্রতিনিধির সংখ্যার চেয়ে কম না হয়। ২৪ ধারার ২ উপধারায় বর্ণিত আছে যে, যে প্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন আছে সেখানে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি ওয়ার্কস কাউন্সিল কমিটিকে প্রতিনিধি মনোনয়ন করবে। কিন্তু, যেখানে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি নেই সেখানে নির্ধারিত নিয়মে ওয়ার্কস কাউন্সিল কমিটিতে শ্রমিকদের প্রতিনিধি বাছাই হবে ঐ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সেই শ্রমিকদের মধ্য থেকে যাদের জন্য তা গঠিত হবে।
৪. প্রশ্ন: কোন ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন চলাকালে মালিকপক্ষ কোন শ্রমিকনেতাকে বদলি করতে পারে কি?
উত্তর: বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৮৭ ধারার বিধান অনুযায়ী কোন ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ও কতিপয় কর্মকর্তাকে বদলি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে ১৮৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা কোষাধ্যক্ষকে তার সম্মতি ছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করা যাবে না।
৫. প্রশ্ন: ষড়যন্ত্র ও আইনের সীমিত প্রয়োগ বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৯৭ ধারায় ষড়যন্ত্র আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৯৭ ধারার বিধান মোতাবেক ট্রেড ইউনিয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ত্বরান্বিত করার স্বার্থে কোন কাজ করলে সে জন্যে মামলায় অভিযুক্ত হবার দায় থেকে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের রেহাই দিয়েছে। এই ধারায় বর্ণিত আছে যে, ধারা ১৭৯ এ উল্লেখিত কোন রেজিস্টার্ড ইউনিয়নের যে লক্ষ্য নির্দিষ্ট রয়েছে তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য সদস্যদের মধ্যে সম্পাদিত কোন চুক্তির ক্ষেত্রে, ঐ ট্রেড ইউনিয়নের কোন অফিসার বা সদস্য অথবা রেজিস্ট্রার কর্তৃক নির্ধারিত কোন যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি দÐবিধি আইনের ১২০-খ ধারার (২) উপধারা মোতাবেক দÐনীয় হবেন না, যদি না ঐ চুক্তি কোন অপরাধ সংঘটন করার অথবা এ আইন ব্যতীত অন্যান্য প্রকারে লঙ্ঘন করার চুক্তি হয়। এই ধারার শর্ত সাপেক্ষে রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য ও কর্মকর্তাকে দÐবিধির ১২০-খ ধারায় দণ্ড হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
৬. প্রশ্ন: রিটার্ন বা বিবরণী কী? কীভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০১ ধারায় রিটার্ন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
১. কোন ইংরেজি পঞ্জিকা বছর শেষ হওয়ার পর পরবর্তী বছরের ৩০শে এপ্রিল এর মধ্যে উক্ত বছর সংক্রান্ত কোন ট্রেড ইউনিয়নের আয় ও ব্যয়ের এবং সম্পদ ও দায়ের হিসাব সম্বলিত একটি সাধারণ বিবরণী বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রস্তুত ও নিরীক্ষণ করে শ্রম পরিচালকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
২. উক্তরূপ সাধারণ বিবরণী যে বছরের জন্য প্রেরণ করা হবে সে বছরের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সকল পরিবর্তন প্রদর্শন করে একটি বিবরণ এবং সর্বশেষ সংশোধনী সম্বলিত গঠনতন্ত্রের একটি কপি উক্ত সাধারণ বিবরণীর সঙ্গে শ্রম পরিচালকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
৩. যদি কোন রেজিস্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়ন উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে উক্তরূপ সাধারণ বিবরণী প্রেরণে ব্যর্থ হয়, তা হলে শ্রম পরিচালক একটি নোটিশ দ্বারা এই সম্পর্কে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন এবং উক্তরূপ নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে যদি ট্রেড ইউনিয়নটি সাধারণ বিবরণী প্রেরণ করিতে পুনরায় ব্যর্থ হয় তা হলে তার রেজিস্ট্রি বাতিলযোগ্য হবে।
৪. যদি কোন ট্রেড ইউনিয়ন কোন ফেডারেশনের সদস্য হয়, তাহলে উক্ত সাধারণ বিবরণীতে উক্ত ফেডারেশনটি নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৭. প্রশ্ন: চেক অফ বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০৪ ধারায় চেক অফ সম্পর্কে বলা হয়েছে। যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি অনুরোধ করিলে যে কোন মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকগণের, যারা ঐ সিবিএ ইউনিয়নের সদস্য, মজুরি হইতে সিবিএ ইউনিয়নের তহবিলে দেয় তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা, ঐ সিবিএ ইউনিয়ন কর্তৃক পেশকৃত ডিমান্ড স্টেটমেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি শ্রমিকের অনুমোদন সাপেক্ষে, কেটে আলাদা করে রাখবেন।
৮. প্রশ্ন: কোন ট্রেড ইউনিয়ন দেশের বাহির হতে চাঁদা সংগ্রহ করতে পারবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৭৯ ধারার ১ (ঘ) উপধারায় ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের উৎস এবং উক্ত তহবিল কীভাবে ব্যবহার করতে হবে; সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের চাঁদা ব্যতিরেকে দেশী বা বিদেশী অন্য কোন উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সরকারকে অবহিত করতে হবে।
৯. প্রশ্ন: চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম সরকার কোন আইনের মাধ্যমে বন্ধ ঘোষণা করেছে?
উত্তর: ২০০৯ সালে শ্রম আইনের সংশোধন করে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরে একটি করে ইউনিয়ন রেখে বাকি সব ইউনিয়ন বাতিল করে দেওয়া হয়। শ্রম আইনের উপধারা ৫ এর বিধান সাপেক্ষে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারকারী, বার্থ অপারেটর, শিল্প হ্যান্ডলিং অপারেটর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিযুক্ত শ্রমিক ও কর্মচারীগণ সমষ্টিগতভাবে স্ব-স্ব বন্দরে একটি করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন।
১০. প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠান পুঞ্জ কী? প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে কীভাবে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৮৩ ধারার ২ উপধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোন নির্ধারিত এলাকায় একই প্রকারের কোন নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন এইরূপ সকল প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়। উক্ত ধারার উপধারা (২) ‘এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন নির্ধারিত এলাকায় নি¤œবর্ণিত যে কোন শিল্প পরিচালনারত সকল প্রতিষ্ঠান, উহাদের প্রত্যেকটিতে নিযুক্ত শ্রমিক সংখ্যা যাহাই থাকুক না কেন, উক্ত এলাকার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলিয়া গণ্য হবে।’
কোন প্রতিষ্ঠান-পুঞ্জে গঠিত কোন ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রি করা যাবে যদি উক্ত প্রতিষ্ঠান-পুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মোট সংখ্যার অন্তত ত্রিশ শতাংশ তার সদস্য হয়।
এই অধ্যায়ে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোন প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে গঠিত কোন ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রে এরূপ বিধান থাকে যে, উক্ত প্রতিষ্ঠান-পুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত নহেন এরূপ কোন ব্যক্তি উহার কর্মকর্তা নির্বাচিত হইতে বা থাকতে পারবেন। তাহা হইলে উক্তরূপ কোন ব্যক্তি উহার কোন কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে বা থাকতে পারবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কোন অবস্থাতেই উক্তরূপ ব্যক্তির সংখ্যা উহার মোট কর্মকর্তার সংখ্যার এক-চতুর্থাংশের অধিক হইতে পারিবে না।
লেখক: এডভোকেট আলমগীর হোসাইন, নির্বাহী সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা।