০১। প্রশ্ন: বাংলাদেশে কতটি শ্রম আদালত আছে এবং কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ টি শ্রম আদালত আছে। যথা: ১। ঢাকা প্রথম শ্রম আদালত ২। ঢাকা দ্বিতীয় শ্রম আদালত ০৩। ঢাকা তৃতীয় শ্রম আদালত ৪। চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালত ৫। চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালত ৬। খুলনা শ্রম আদালত ৭। রাজশাহী শ্রম আদালত ৮। সিলেট শ্রম আদালত ৯। বরিশাল শ্রম আদালত ১০। রংপুর শ্রম আদালত ১১। গাজীপুর শ্রম আদালত (নতুন) ১২। নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালত (নতুন)। ভবিষ্যতে ময়মনসিংহ বিভাগসহ আরও কিছু নতুন শ্রম আদালত সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।
০২। প্রশ্ন: শ্রম আদালতে কী ধরনের মামলা হয়?
উত্তর: শ্রম আদালতে মূলত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, যেকোন ধরনের পাওনাদি আদায় ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করা যায়। এছাড়াও কোন প্রতিষ্ঠান বা কারখানার মালিক বা কোন শ্রমিক শ্রম আইনের আদেশ পালন না করলে বা লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু হয়।
০৩। প্রশ্ন: শ্রম আদালত সিভিল নাকি ক্রিমিনাল?
উত্তর: শ্রম আদালত সিভিল নাকি ক্রিমিনাল এটা জানার জন্য শ্রম আইনের ২১৪ ও ২১৫ ধারা ভালভাবে পাঠ করতে হবে। উক্ত ধারার ১২ উপধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারী কার্যবিধি এর পঁয়ত্রিশতম অধ্যায়ের বিধানাবলী শ্রম আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে এবং উক্ত অধ্যায়ের উদ্দেশ্যে শ্রম আদালত একটি দেওয়ানী আদালত বলিয়া গণ্য হইবে
অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতের ক্ষমতা ও কার্যক্রম ২১৫ (১) এই আইনের বিধান সাপেক্ষে, শ্রম আদালত অপরাধ বিচারকালে, যতদূর সম্ভব, ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করিবে।
(২) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের উদ্দেশ্যে ফৌজদারী কার্যবিধির অধীন প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ন্যস্ত সকল ক্ষমতা শ্রম আদালতেরও থাকিবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে উক্ত কার্যবিধির অধীন সেশন আদালতের উপর ন্যস্ত সকল ক্ষমতা শ্রম আদালতেরও থাকিবে
০৪। প্রশ্ন: শ্রম আইনের কত ধারায় শ্রম আদালতে দরখাস্তের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২১৩ নং ধারায় শ্রম আদালতে দরখাস্তের কথা বলা হয়েছে। কোন যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি অথবা কোন মালিক অথবা কোন শ্রমিক এই আইন বা কোন রোয়েদাদ বা কোন নিষ্পত্তি বা চুক্তির অধীন বা দ্বারা নিশ্চিত বা প্রদত্ত বা কোন প্রচলিত প্রথা বা কোন বিজ্ঞপ্তি বা কোন আদেশ বা কোন নোটিফিকেশন বা অন্য কোন ভাবে স্বীকৃত কোন অধিকার প্রয়োগের জন্য শ্রম আদালতে দরখাস্ত করিতে পারিবেন।
০৫। প্রশ্ন: শ্রম আদালত কিভাবে গঠিত হবে?
উত্তর: শ্রম আদালত গঠন সর্ম্পকে শ্রম আইনের ২১৪ নং ধারায় উল্লেখ আছে যে
(১) এই আইনের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রম আদালত স্থাপন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন একাধিক শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হইলে, সরকার উক্ত প্রজ্ঞাপনে উহাদের প্রত্যেককে যে এলাকায় এই আইনের অধীন এখতিয়ার প্রয়োগ করিবে উহা নির্ধারণ করিয়া দিবে।
(৩) শ্রম আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং তাহাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য, দুইজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, তবে কোন অপরাধের বিচার অথবা দশম এবং দ্বাদশ অধ্যায়ের অধীন কোন বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে উহা কেবল মাত্র চেয়ারম্যান সমন্বয়ে গঠিত হইবে।
(৪) শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন।
(৫) শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণের নিযুক্তির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
(৬) শ্রম আদালতের দুইজন সদস্যের মধ্যে একজন মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী এবং অপরজন শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী হইবেন এবং তাহারা উপ-ধারা (৯) এ বর্ণিত পন্থায় নিযুক্ত হইবেন।
(৭) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দুইটি সদস্য তালিকা প্রস্তুত করিবে, যাহার একটিতে ছয়জন মালিক প্রতিনিধির নাম এবং অপরটিতে ছয়জন শ্রমিক প্রতিনিধির নাম থাকবে।
০৬। প্রশ্ন: শ্রম আদালতে অভিযোগের পদ্ধতি কত নং ধারায় উল্লেখ আছে?
উত্তর: শ্রম আইনের ৩৩ নং ধারায় অভিযোগ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
(১) লে-অফ, ছাঁটাই, ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অপসারণ অথবা অন্য যে কোন কারণে চাকুরির অবসান হইয়াছে এরূপ শ্রমিকসহ যে কোন শ্রমিকের, এই অধ্যায়ের অধীন কোন বিষয় সম্পর্কে যদি কোন অভিযোগ থাকে এবং যদি তিনি তৎসম্পর্কে এই ধারার অধীন প্রতিকার পাইতে ইচ্ছুক হন তাহা হইলে তিনি, অভিযোগের কারণ অবহিত হওয়ার তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে অভিযোগটি লিখিত আকারে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মালিকের নিকট প্রেরণ করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি সরাসরি গ্রহণ করিয়া লিখিতভাবে প্রাপ্তি স্বীকার করেন, সেই ক্ষেত্রে উক্ত অভিযোগটি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে না পাঠাইলেও চলিবে।
(২) মালিক অভিযোগ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে শুনানীর সুযোগ দিয়া তৎসম্পর্কে তাহার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে শ্রমিককে জানাইবেন।
(৩) যদি মালিক উপ-ধারা (২) এর অধীন কোন সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হন, অথবা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক যদি উক্তরূপ সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হন, তাহা হইলে তিনি উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে অথবা, ক্ষেত্রমত, মালিকের সিদ্ধান্তের তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে লিখিতভাবে অভিযোগ পেশ করিতে পারিবেন।
(৪) শ্রম আদালত অভিযোগ প্রাপ্তির পর উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করিয়া অভিযোগটি সম্পর্কে তাহাদের বক্তব্য শ্রবণ করিবে এবং উহার বিবেচনায় মামলার অবস্থাধীনে যেরূপ আদেশ দেওয়া ন্যায়সঙ্গত সেরূপ আদেশ প্রদান করিবে।
০৭। প্রশ্ন: আই আর মোকাদ্দমা কি এবং এই মোকাদ্দমা কখন হবে?
উত্তর: আই আর শব্দের অর্থ হচ্ছে ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল রিলেশনশীপ। অর্থাৎ যে মোকাদ্দমা দায়ের হবার পরেও প্রতিষ্ঠানের সাথে শ্রমিকের সম্পর্ক বহাল থাকে তাকে আই আর মোকাদ্দমা বলে। উক্ত মোকাদ্দমায় বকেয়া পাওনাসহ চাকরি ফেরত চাওয়া হয়। শ্রম আইনের ২১৩ নং ধারায় এই মোকাদ্দমা শ্রম আদালতে দায়ের হয়। সাধারণত চাকরি জীবনে একজন শ্রমিক যদি ৫ বছরের পূর্বে চাকরি ইস্তফাজনিত অবসান হয় তাহলে শ্রমিক কোন সার্ভিস বেনিফিট পায় না। তাই অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ শ্রমিকের নিকট হতে জোর করে ইস্তফা পত্র নিয়ে থাকে। এই রকম পরিস্থিতি হলে নিরাপদ হচ্ছে চাকরি ফেরত ও পাওনাদি চেয়ে আই আই আর মোকাদ্দমা দায়ের করা।
০৮। প্রশ্নঃ শ্রম আদালতে মোকাদ্দমায় কত টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়?
উত্তরঃ শ্রম আইনের ১৩৩ ধারায় বলা আছে-১৩২ এর অধীন কোন দরখাস্তের জন্য দরখাস্তকারীকে সমন জারীর ফিস ব্যতীত আর কোন কোর্ট ফিস দিতে হইবে না।
০৯। অন্যান্য মোকাদ্দমার মত কি শ্রম আদালতে শ্রমিককে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়?
উত্তরঃ শ্রম আদালত মূলত বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত একটি আদালত। এই আদালতে সাধারণত শ্রমিকগণ তাদের পাওনাদি পাবার জন্য মোকাদ্দমা দায়ের করে থাকেন। অন্যান্য মোকাদ্দমার মত শ্রম আদালতে এসে শ্রমিককে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয় না। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী হাজিরা দিয়ে থাকেন। তবে, এক বা দুইবার জবানবন্দি ও জেরার জন্য শ্রমিককে শ্রম আদালতে আসতে হয়।
১০। প্রশ্ন: শ্রম আদালতের কোন রায়, সিদ্ধান্ত বা রোয়েদাদ এর বিরুদ্ধে কোথায় এবং কতদিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২১৭ ধারায় আপিল সংক্রান্ত বিধানের কথা বলা হয়েছে। শ্রম আদালতের রায়, ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপিল হবে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে । এই আইন সাপেক্ষে, শ্রম আদালত কর্তৃক প্রদত্ত কোন রায়, সিদ্ধান্ত, রোয়েদাদ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে কোন সংক্ষুব্ধ পক্ষ, উহা প্রদানের ষাট দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের করিতে পারিবে, এবং উক্তরূপ আপিলের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে। উপযুক্ত কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া আদালত উক্ত সময়সীমা আরও ৯০ (নব্বই) দিন বর্ধিত করিতে পারিবে।
লেখক: এডভোকেট আলমগীর হোসাইন, নির্বাহী সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা।