বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, মেহনতি শ্রমিকদের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা ইসলামী আদর্শে নিহিত রয়েছে। দুনিয়াবী বিভিন্ন মতবাদ যেখানে শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা লুণ্ঠন করেছে সেখানে ইসলাম শ্রমিকদের সুরক্ষা দিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের একমাত্র রক্ষাকবচ ইসলাম।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ফেডারেশনের বার্ষিক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান-এর সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, লস্কর মো. তসলিম, মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া ও মনসুর রহমান প্রমুখ।
আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, শ্রম ছাড়া পৃথিবী চলতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে শ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ কোনো না ভাবে শ্রম বিনিয়োগ করে থাকে। তবে যারা শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তাদের গুরুত্ব সর্বাগ্রে। এই শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পৃথিবীকে সচল রেখেছে। লক্ষ কোটি বনি আদমের খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্রের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। হাতুড়ির আঘাতে শ্রমিকদের হাত ক্ষতবিক্ষত হয়। বস্ত্র শ্রমিকদের চোখের জ্যোতি কমে যায়। কৃষকরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সোনালী ফসল ঘরে তুলে আনে। শ্রমিকদের এই মেহনত রাসুল (সা.) অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখতেন। তিনি শ্রমিকের ক্ষতবিক্ষত হাতে চুমু খেতেন। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় তিনি ছিলেন কঠোর। তিনি বলেছেন, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার মজুরি পরিশোধ করতে। এই রকম নির্দেশনা আর কেউ আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি এবং আগামী দিনেও পারবে না।
তিনি বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার নামে শত শত বইপত্র লেখা হয়েছে। নতুন নতুন মতবাদ রচনা করা হয়েছে। কিন্তু যখন এসব মতবাদ বাস্তবে রূপদান করা হলো তখন দেখা গেলো কোনো মতবাদই পরিপূর্ণ না। বরং প্রতিটি মতবাদ রচিত হয়েছে নিজ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। ফলে শ্রমিকরা অধিকারের বদলে নির্যাতিত নিষ্পেষিত হয়েছে। এসব মতবাদ শ্রমিকের অধিকারে নামে মানুষে মানুষে শ্রেণি বিভাগ করেছে। মালিকের মর্যাদা উঁচুতে এবং শ্রমিকের মর্যাদা নিম্নস্তরে স্থাপন করেছে। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে তারা সমাজ রাষ্ট্রে অশান্তির বীজ বোপন করেছে। যার ফলে আজকে মালিক ও শ্রমিক একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
আজকের পৃথিবীতে শ্রমিকের সত্যিকার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এসব বস্তাপচা মতবাদ ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান তথা ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেভাবে শ্রমিকদের বুকে টেনে নিয়েছেন সেভাবে শ্রমিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। সকল ধরনের শ্রেণি প্রথাভেদ বাতিল করতে হবে। মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত হবে তার কর্মের উপর। মসজিদের কাতারে যেমন ধনী গরিব পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করে ঠিক একইভাবে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে মালিক-শ্রমিকের কাঁধ একাকার করে দিতে হবে। তাহলেই শ্রমিকরা ফিরে পাবে তাদের অধিকার ও মর্যাদা।