বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পাট শিল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা,কর্মকর্তাদের ভুল পরিকল্পনা, অপচয়, লুটপাট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও বিপণনে ব্যর্থতা, এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শ্রমিকরা তার প্রাপ্য পাচ্ছেনা। ফলে শ্রমিক কর্মচারীদের জীবনে চরম অভাব অনটন নেমে আসে।সরকারের ভ্রান্তনীতির জন্য আজ খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বকেয়া মজুরী না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শ্রমিকরা আর ধ্বংসের মুখে পাট শিল্প।
গতকাল বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পরিচালনায় এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান,লস্কর মো: তসলিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আযহারুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক আবুল হাশেম, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর হোসাইন,শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বাছির, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আমিন, আইন- আদালত সম্পাদক এডভোকেট জাকির হোসেন প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যর বরাত দিয়ে বলেন , ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয় ১১১ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ কোটি ৬ লাখ ডলারে। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে ৮২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে এসে দাঁড়ায়। এরপরের অর্থবছরে রফতানি আবার বাড়ে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি হয় ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি হয় ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই রফতানি আয় সামান্য বেড়ে হয় ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। রফতানি আয় বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা ১০ বছর পূর্বের রফতানির চেয়েও অনেক কম।অথচ বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদা ও গুরুত্ব বাড়লেও বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ মানসম্পন্ন পাট উৎপাদনকারী বাংলাদেশ তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে বাঁচাতে দ্রুত খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বকেয়া মজুরী ও শ্রমিকদের দাবি পূরণ করে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে হবে। একইসঙ্গে সকল পাটকলসমূহকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন করতে হবে। অদক্ষ প্রশাসনকে অপসারণ করে পাট শিল্পের সাথে যুক্ত দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। লুটপাট ও লোক দেখানো সংস্কারের নামে প্রজেক্ট করে অর্থ অপচয় না করে শ্রমিকের ও শিল্পের স্বার্থে অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং উৎপাদনের কাঁচামাল সঠিক সময়ে সংগ্রহ ও সরবরাহে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যাবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের অদক্ষ-দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনের ব্যর্থতার দায় যেন আর শ্রমিকদের ভোগ করতে না হয়।সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন-মজুরি পরিশোধ করে সোনালি আঁশখ্যাত পাট তার হারানো গৌরর ফিরে পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।