বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের উদ্যোগে ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভে শ্রমিক আন্দোলন’ শীর্ষক সেমিনার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদিকা রোজিনা আখতার-এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের মহিলা বিভাগের উপদেষ্টা বেগম নুরুন্নিসা সিদ্দিকা। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট কমার্স কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহিমা খানম হেপী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, সহ-সভাপতি লস্কর মুহাম্মদ তসলিম, লইয়ার্স কাউন্সিলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ইসলাম শ্রমজীবী মানুষদের অত্যাধিক মর্যাদায় ভূষিত করেছে। রাসুল (সা.)-সহ অধিকাংশ নবী-রাসুল শ্রমিক ছিলেন। আমাদের প্রিয় নবী শ্রমিকদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি বলেন, একজন মুমিন নিজে পরিশ্রমী হবে এবং যারা পরিশ্রম করে তাদেরকে সম্মান করবে। আমিরুল মোমেনীন ওমর ফারুক (রা.) রাতের বেলা মানুষের ঘরে খাদ্য পৌঁছানোর সময় নিজ পিঠে আটার বস্তা তুলে নিতেন। জেরুজালেম সফর কালে তিনি তার ভৃত্যকে উঠের ওপর বসিয়ে তিনি রশি টেনেছেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিজেরা যেমন শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন ঠিক অনুরূপভাবে যারা শ্রম দিয়ে মানবসভ্যতা সচল রেখেছে তাদেরকে তারা সম্মানিত করে আল্লাহর কাছে তারা নৈকট্য লাভ করেছেন।
সেমিনারে নিম্মোক্ত প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে:
১.সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
২.বয়স্ক ভাতার সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা এবং শ্রমজীবী মানুষদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩.সকল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য বর্তমান বাস্তবতার আলোকে মজুরি বোর্ড গঠন ও বাস্তবায়ন করা।
৪.সকল বন্ধকৃত কল-কারখানা খুলে দিতে হবে। শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
৫.সকল কল-কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা।
৬.মাতৃত্বকালীন সুবিধা ৬ মাস করতে হবে। শিশু লালন কক্ষ, প্রশিক্ষিত নার্স থাকতে হবে।
৭.ক্যান্টিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, হাসপাতাল, আবাসন ও উন্নত মানের স্কুল সুবিধা এবং যানবাহন সুবিধা থাকতে হবে।
৮.পদ মর্যাদা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।
৯.শ্রমিকদের অবসরকালীন ভাতা চালু করতে হবে। ওভার টাইম ভাতা দিগুণ করতে হবে।
১০.ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে। যখন তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে।
১১.নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১২.মালিক ও শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য নৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩.ধর্মীয় কার্যক্রমের সুযোগসহ বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১৪.কারখানা ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকের অংশগ্রহণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১৫.ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।