গত সংখ্যার পর……..
মিসওয়াক করা: মিসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিস হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কার করার উপকরণ এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উপায়।” (নাসাঈ)। মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরেকটি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, “মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুণ বেশি ফজিলত রয়েছে।” (বায়হাকী)।
মিসওয়াক করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল (সা.) এই ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি না আমি আমার উম্মতকে কষ্ট ফেলব মনে করতাম; তাহলে আমি তাদের অবশ্যই হুকুম করতাম, এশার নামাজ রাত্রির দ্বিপ্রহর পর্যন্ত পিছিয়ে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করতে।” (বুখারী ও মুসলিম)। আল্লামা নবি বলেন, সর্বাবস্থায় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। তবে পাঁচ সময় মিসওয়াক করা বিশেষ মুস্তাহাব। ১. নামাজের সময় ২. কুরআন তিলাওয়াতের সময় ৩. অজু করার সময় ৪. নিদ্রা হতে জাগ্রত হবার পর ৫. মুখে দুর্গন্ধ দেখা দিলে। চাই তা খাবার খাওয়ার কারণে হোক বা অন্য কারণে হোক। চুপ থাকার কারণে হোক বা অধিক কথা বলার কারণে হোক। হযরত শোরাইহ ইবনে হানী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করলাম রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘরে ঢুকতেন তখন কোন কাজ প্রথমে করতেন। উত্তরে আয়েশা বললেন মিসওয়াক। কেননা দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকার কারণে মুখে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে এবং এতে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে; যাতে তাদের কষ্ট হতে পারে।
দশটি স্বভাব: দশটি স্বভাব মানুষের সনাতন স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দশটি বিষয় হল সনাতন স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ খাটো করা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আগুলের গিরাসমূহ ধোয়া, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, গুপ্তস্থানের লোম কাটা ও ইস্তিঞ্জা করা। বর্ণনাকারী বলেন দশমটা অমি ভুলে গিয়েছি সম্ভবত কুলি করা হবে।” (মুসলিম)। অপর বর্ণনায় দাঁড়ি লম্বা করার স্থলে খাতনা করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
প্রতি চল্লিশ দিনের ভিতর গোঁফ, নাভি ও বগলের নিচের পশম কাটা প্রয়োজন: হযরত আনাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “আমাদের জন্য গোঁফ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম পরিষ্কার করা ও গুপ্তস্থানের লোম কাটার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে; যে আমরা যেন চল্লিশ দিনের বেশি এসব পরিষ্কার করা ত্যাগ না করি।” (মুসলিম)।
চুল সুন্দরভাবে রাখা সুন্নাত: পুরুষদের জন্য বাবরী চুল রাখা সুন্নাত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাধারণ অভ্যাস ছিল বাবরী চুল রাখা। তা তিন পদ্ধতিতে হতে পারে। “১. উভয় কাঁধ বরাবর। ২. ঘাড়ের মাঝামাঝি। ৩. উভয় কানের লতি পর্যন্ত।” (আবু দাউদ: ৪১৮৩-৪১৮৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুণ্ডাননি। এ সময় তিনি মাথা মুণ্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য ইমাম তাহতাবী (রহ.) বলেন, মাথা ন্যাড়া করাও সুন্নাত। আর কিছু অংশ মুণ্ডানো ও কিছু রেখে দেওয়া নিষেধ। মুণ্ডাতে ইচ্ছে না করলে চুল ছোট রাখা যেতে পারে।
মেয়েদের জন্য চুল মুণ্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড়ো রাখা উচিত নয় যে, গোসলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সে মতে কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়েয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই। (তিরমিজি: ১/১৮২, মুসলিম: ১/১৪৮)।
গোসল করা: পবিত্রতার উদ্দেশ্যে দেহের সর্বাঙ্গে পানি দিয়ে দিয়ে ধৌত করাকে গোসল বলে। গোসল কয়েক প্রকার:
ক. ফরজ গোসল: যৌন উত্তেজনায় নারী-পুরুষের বীর্যপাত হলে গোসল করা ফরজ। নারী-পুরুষের লিঙ্গদ্বয় মিলিত হলে গোসল করা আবশ্যক। হায়েয ও নিফাস বন্ধ হলেও গোসল করতে হয়।
খ. ওয়াজিব গোসল: যেমন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া।
গ. সুন্নাত গোসল: যেমন জুমা, ঈদ, আরাফার দিন ও ইহরামের জন্য গোসল করা।
ঘ. মুস্তাহাব গোসল: যেমন কোন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।
কুদুরী কিতাবের বর্ণনা মতে, গোসলের ফরজ তিনটি- ১. কুলি করা ২. নাকে পানি দেওয়া ৩. সমস্ত শরীর ধৌত করা। গোসল করার নিয়ম সম্পর্কে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। হযরত আয়েশা বলেন রাসুলে কারিম (সা.) যখন জানাবতের গোসল করতে মনস্থ করতেন; প্রথম দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করতেন। অতঃপর নামাজের অজুর ন্যায় অজু করতেন। অতঃপর অঙ্গুলি সমূহ পানিতে ডুবাতেন এবং হাত দ্বারা চুলের গোড়া (ভিজা হাত দ্বারা) খিলাল করতেন। এরপর দুই হাত দ্বারা অঞ্জলি ভরে তিনবার মাথার উপর পানি ঢালতেন। অতঃপর সারা শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
পানাহার এর সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা: হযরত আবকাতাদাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পানি পান করে সে যেন; পানি পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করে। (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদিস থেকে জানা যায় যে, এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি পান করা মাকরুহ। একে জানোয়ারের পানি পানের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাই কমপক্ষে তিন শ্বাসে পানি পান করতে হয় এবং পাত্রকে মুখ থেকে আলাদা করে বাইরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা সুন্নাত। একটানে পানি পান করলে একদিকে তৃপ্তি হয় না অপরদিকে পানি গলায় আটকে যেতে পারে। আর পান-পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে পানি দূষিত হয়ে যেতে পারে।
সালাম দেওয়া এবং সালাম দিলে উত্তমভাবে জবাব দান করা: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে অমর বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলে কারিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন; ইসলামের কোন অভ্যাসটি উত্তম? তিনি জবাব দিলেন, “আহার করানো এবং পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম করা।” (বুখারী ও মুসলিম)। সালাম দেওয়া সুন্নাত কিন্তু উত্তমভাবে জবাব দেওয়া ওয়াজিব। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “যখন কেউ তোমাদেরকে সম্মানের সাথে সালাম দেয়, তখন এর চেয়ে আরও ভালোভাবে এর জবাব দাও। অথবা কমপক্ষে ঐভাবেই দাও (যেভাবে সে দিয়েছে)। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের হিসেব নিয়ে থাকেন।” (সুরা নিসা: ৮৬)। হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। যথা- ১. কোন মুসলমান পীড়িত হলে তাকে দেখতে যাওয়া ২. কোন মুসলমানের মৃত্যু হলে তার দাফন-কাফন ও জানাযায় অংশ গ্রহণ ৩. কোন মুসলমান দাওয়াত করলে তার দাওয়াত কবুল করা ৪. কোন মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম দেওয়া ৫. কোন মুসলমান হাঁচি দিলে তার উত্তর দেওয়া ৬. উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকলকে সদুপদেশ দান করা বা প্রত্যেকের মঙ্গল কামনা করা।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে, পদাতিক ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং অল্প লোক বেশি লোককে সালাম দিবে।” (বুখারী ও মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত। নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে কোন লোক তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে দেখা হলে সালাম করবে। অতঃপর যদি কোন গাছ, দেয়াল বা বড়ো পাথর তাদের মধ্যবর্তী হয় এবং আবার দেখা হয় তাহা হলে আবার সালাম করবে।” হযরত কাতাদাহ হতে বর্ণিত। নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করবে; তখন ঘরের লোকজনকে সালাম করবে। আর যখন ঘর হতে বের হবে; তখন ঘরের লোকজনকে সালাম দিয়ে বের হবে।” হযরত জাবের হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) বলেছেন, “কথা বলার আগে সালাম করা উচিত।”
হাঁচি দেওয়া ও জবাব দেওয়া: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি হাঁচি দেয়, তার আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত। আর তার কোন ভাই বা সাথি উহা শুনে ইয়ারহামুকুমুল্লাহ বলা উচিত। সুতরাং যখন ইয়ারহামুকুমুল্লাহ বলবে তখন হাঁচি দাতা ব্যক্তি বলবে ইয়াহদিকুমুল্লাহ ওয়া ইউছলিহ লাকুম (আল্লাহ তোমাকে হিদায়েত করুন এবং তোমার অবস্থা ভাল করুন।” (বুখারী)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তির হাই আসে তখন সে মুখে হাত রাখবে। কেননা শয়তান মুখ খোলা পেলে ভিতরে প্রবেশ করে।” (মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাঁচি আসলে স্বয়ং মুখমণ্ডল হাত অথবা কাপড় দ্বারা ঢেকে নিতেন এবং হাঁচির শব্দকে ছোট করতেন। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)।
মুচকি হাসি সুন্নাত: “হযরত আয়েশা বলেন আমি নবি কারিম (সা.) কে মুখ খুলে হাসতে কখনও দেখি নাই; যে তাঁর মুখ গহবর পরিদৃষ্ট হয়। বরং তিনি অধিকাংশ সময় তাবাসসুম অর্থাৎ মুচকি হাসতেন।” (বুখারী)। হযরত কাতাদাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন ইবনে উমরের নিকট জিজ্ঞাসা করা হল আল্লাহর রাসুলের সাহাবিগণ কি হাসতেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর তারা অন্তরে পাহাড়ের চেয়েও অধিক ভারী ঈমান পোষণ করতেন।” বেলাল ইবন সায়ীদ বলেন আমি সাহাবাগণকে তীরের লক্ষ্য স্থলে দৌঁড়াইতে দেখেছি এমতাবস্থায় তাঁরা একে অন্যকে দেখে হাঁসতেন। কিন্তু রাত হলে তাঁরা বিছানা ছেড়ে আল্লাহর ইবাদত করতেন। (শরহে সুন্নাহ)।
ডান দিক থেকে পোশাক পরিধান করা এবং বাম দিক থেকে খোলা: আল্লাহর রাসুল ডান দিক থেকে পোশাক পরিধান করতেন ও বাম দিক থেকে খুলতেন। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। “তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) যখন পোশাক পরিধান করতেন তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন।” (তিরমিজি)। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন জুতা পরিধান করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে আর যখন খুলবে তখন বাম দিক থেকে শুরু করবে। ডান দিক পরিধানের ক্ষেত্রে প্রথম আর বাম দিক খোলার ক্ষেত্রে প্রথম হওয়া উচিত।” (বুখারী ও মুসলিম)।
আল্লাহর রাসুলের প্রিয় পোশাক: উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত। “তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) পোশাক হিসেবে ‘কামিস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন” (ইবনে মাজাহ: ৪০২৭)। আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। “তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো হিবারা (ইয়ামানে তৈরি চাদর)।” (বুখারী: ৫৮১৩)।
অতিরিক্ত পোশাক পরিচ্ছেদ রাখা আল্লাহর রাসুল পছন্দ করতেন না: হযরত আমর ইবন শুয়াইব থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে আর তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন তোমরা খাও, পান কর ও সদকা কর এবং পোশাক পরিধান কর যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ইসরাফের সাথে মিশ্রিত না হয়।
সাধাসিধে জীবন যাপন করা ঈমানের লক্ষণ: হযরত আবু উমামাহ ইবন আয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, “তোমরা কি শুনেছো! তোমরা কি শুনেছো!! যে সাদাসিদে জীবন-যাপন করা হচ্ছে ঈমানের লক্ষণ।” (আবু দাউদ)। তবে আর্থিক সচ্ছলতার সাথে সঙ্গতি রেখে পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা উচিত। হযরত আমর ইবন শুয়াইব থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে আর তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর চাল চলনে তাঁর নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ পছন্দ করেন।” (তিরমিজি)। হাদিস থেকে আরও জানা যায় যে, অহংকার বশত টাখুনর নিচে কাপড় পরিধান, রেশমী পোশাক পরিধান ও স্বর্ণের আংটি হাতে দেওয়া পুরুষের জন্য নিষেধ।
ঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় দুআ পাঠ: ঘর থেকে সফরে বের হওয়ার সময় পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আল্লাহর রাসুল এই দোয়া পাঠ করতেন। “তোমার দ্বীন, তোমার আমানত, তোমার কাজের শেষ পরিণতি আল্লাহর ওপর সোপর্দ করলাম। আল্লাহ যেন তোমার তাকওয়া বৃদ্ধি করে দেন। তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আর তুমি যেখানেই থাক যে কাজই কর, কল্যাণকর (সকল) দিক যেন আল্লাহ তোমার জন্য সহজ করে দেন।” (আবু দাউদ, তিরিমিজি, মিশকাত)। অতঃপর ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে পড়তেন, “আমি আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হচ্ছি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কারো কোনো শক্তি নেই।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
একজন দায়ীর দৈনিক রুটিন: ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন। রাসুলে কারিম (সা.) এশার নামাজ পড়ে তাঁর ঘরে আসতেন। এরপর চার রাকাআত নামাজ আদায় করতেন এবং অতঃপর ঘুমিয়ে পড়তেন। এরপর মধ্যরাতের কিছুক্ষণ আগে বা পরে ঘুম থেকে জাগতেন। ঘুম থেকে জেগে হাত দ্বারা মুখ মুছে নিতেন এবং সুরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। তারপর অজু করে দুই রাকাআত করে করে আট রাকাআত কিয়ামুল্লাইল নামাজ পড়তেন। এরপর বিতরের নামাজ আদায় করে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন। ফজরের নামাজের আজান দেওয়া হলে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে মসজিদে যেতেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করতেন। এরপর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসতেন; রাতের স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতেন। তারপর মসজিদে বসে দুআ, তাসবিহ ও তিলাওয়াত করতেন। তারপর সালাত আল ইশরাক আদায় করতেন। অতঃপর নাস্তা করতেন। সালাতুয যোহা আদায় করে হাটে-বাজারে যেতেন। সালাতুয যোহর আদায় করে খেতেন এবং তারপর কায়লুলা করতেন। অতঃপর আসর নামাজ শেষে আবার মুসল্লিদের দিকে তাকিয়ে বসতেন এবং খোঁজ খবর নিতেন। তারপর হযরত ফাতেমাসহ আত্মীয় স্বজন উম্মাহাতুল মুমিনিনদের সকলের খোঁজ খবর নিতেন। মাগরিবের সময় হলে সান্ধ্যকালীন আযকার পাঠ করতেন। মাগরিবের আজানের পর নামাজের আগে মাঝে মধ্যে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। মাগরিবের নামাজের পর সালাতুল আউয়্যাবিন আদায় করতেন। এশার আগে রাতের খাবার খেতেন। এশার নামাজ শেষে অজু অবস্থায় ডান কাত হয়ে ঘুমাতে যেতেন। আর ঘুমের আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক