‘বাজেট শুধু সংখ্যার সমষ্টি নয়, এটি আমাদের মূল্যবোধ এবং আকাক্সক্ষার বহিঃপ্রকাশ।’ জেকব লিও, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী
বাজেট বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে সরকারের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের হিসাবকে বুঝায়। অন্যকথায় জাতীয় বাজেটে রাষ্ট্রের বার্ষিক ব্যয় ও আয়ের সম্ভাব্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। তাই প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্যই বাজেট অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কোন নির্দিষ্ট বছরে সরকার বিভিন্ন খাতে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে এবং কোন কোন উৎস হতে এ অর্থ সংগৃহীত হবে তার বিস্তারিত বিবরণ বাজেটে লিপিবদ্ধ থাকে। প্রফেসর জন এফ ডিউ (J.F.Due) বলেন, বাজেট বলতে মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গৃহীত আর্থিক পরিকল্পনাকে বুঝায় (A budget in the central … of the term is a financial plan for a specified period of time.)। বাজেটে শুধু সরকারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হলে কীভাবে সে ঘাটতি পূরণ করা হবে অথবা ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশি হলে উদ্ধৃত অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হবে তা বাজেটে নির্দেশিত হয়ে থাকে। প্রফেসর টেইলর বাজেটকে সরকারের একটি উঁচু দরের আর্থিক পরিকল্পনা (Master financial plan) বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে সরকার কোন কোন উৎস হতে কী পরিমাণ অর্থ আয় করবে এবং কোন কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে তার বিস্তারিত হিসাব নিকাশকে ‘বাজেট’ বলা হয়। আধুনিককালে বাজেট যে কোন দেশের অর্থনৈতিক নীতির একটি হাতিয়ার (Instrument of economic policy) এ পরিণত হয়েছে।
একটি দেশের বাজেটের কর্মকাণ্ড অনেক ব্যাপক। বাজেটের লক্ষ্য শুধু সরকারের আয় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা নয়, এর লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বাংলাদেশেও নতুন অর্থ বছরের প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজেটগুলো জনপ্রত্যাশা পূরণে খুব একটা সহায়ক হয়নি। এদেশবাসী অনেকদিন ধরেই জনবান্ধব, শ্রমজীবীবান্ধব ও সুষম বাজেট পায়নি বলে অভিযোগটা বেশ পুরানো এবং বাজেটগুলো বরাবরই অসমতার দোষে দুষ্ট। এই ‘অসম’ কথাটা আবার ‘ঘাটতি’র বৃত্তেই সীমাবদ্ধ। আর প্রতিবছরই আমাদের বাজেট ঘাটতির পরিসর বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ৯ জুন ২০২২ এ বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। ৩০ জুন ২০২২ তা জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাশও হয়ে যায়। ৫২তম বাজেট জুন মাসে তিনিই পেশ করবেন। একটি হবে তার পেশকৃত পঞ্চম বাজেট।
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজেটগুলো জনপ্রত্যাশা পূরণে খুব একটা সহায়ক হয়নি। এদেশবাসী অনেকদিন ধরেই জনবান্ধব, শ্রমজীবীবান্ধব ও সুষম বাজেট পায়নি বলে অভিযোগটা বেশ পুরানো এবং বাজেটগুলো বরাবরই অসমতার দোষে দুষ্ট।
বাজেট বাংলাদেশের জনগণের কাছে বিশেষ করে অবহেলিত সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী মানুষের ভয়ানক ভীতিপ্রদ একটি শব্দ। এ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চাল, ডাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহার্য পণ্য এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা স্মরণ হয়। বাজেট ঘোষণার পর পরই গ্রামাঞ্চলের শিল্পাঞ্চলের শ্রমজীবী মেহনতি সাধারণ মানুষও কৌতূহলী হন কোনো জিনিসের দাম কত বেড়েছে তা জানার জন্য। কেননা বাজেট পেশের পর কখনো কোনো জিনিসের দাম কমেছে এমন অভিজ্ঞতা স্বাধীনতার পর থেকে অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকেই নেই। প্রায় প্রতিটি বাজেট ঘোষণার পর পরই সকল ধরনের দ্রব্য পণ্যের মূল্য কেবল বেড়েছে। কালে ভদ্রে যদি কোন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি না ঘটে, তবে আগের বছর যেটা বেড়েছে সেটাতেই হয়তো স্থির হয়ে গেছে। এটিই এদেশের শ্রমজীবী মানুষসহ সকল মানুষের গত ৫২ বছরের বাজেট অভিজ্ঞতা। বর্তমানে তিন স্তরে ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। পণ্যের মূল্য নিয়ে লুকোচুরি করতে পাকা রশিদ, চালান, মেমো কিংবা ইনভয়েস ছাড়াই উৎপাদনকারী, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। মূল্য নির্ধারণের ফাঁকফোকরে উৎপাদনকারী থেকে খুচরা কারবারি একে অপরের কাছ থেকে দাম বেশি নিচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি ভোক্তার উপর। কারণ দিনশেষে ভোক্তাকে বেশি দাম পরিশোধ করে পণ্য সামগ্রী কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী। এমনকি মুদি পণ্যের খুচরা দোকানে প্রতিদিনের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করার বিধান থাকলেও খোদ রাজধানীর বেশিরভাগ ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দোকানে সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে না। নতুন বাজেট ঘোষণার আগেই পণ্যের দাম বাড়াতে বিভিন্ন অপতৎপরতা শুরু করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।
শ্রমজীবী মানুষের ভয়ানক ভীতিপ্রদ একটি শব্দ। এ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চাল, ডাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহার্য পণ্য এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা স্মরণ হয়।
পেশকৃত বাজেটে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুন্দর আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণিত হয়। কিন্তু আয় ও ব্যয় যেভাবে ধরা হয় তার যৌক্তিকতা বাস্তবতার নিরিখে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বছরের পর বছর এটি লক্ষণীয়, রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্য যতটা ধরা হয় তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কাঁটছাট করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের বেশিরভাগ অর্থই বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। এ বাজেটের বেশিরভাগ অর্থই প্রকল্প সাহায্য, পণ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্য প্রভৃতি আকারে বিদেশ থেকে আসে এবং এ সম্পদ দিয়েই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP) এর অর্থায়ন করা হয়। উন্নয়ন বাজেটে ঘাটতি দেখা দিলে সরকার তা পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। সরকারের প্রশাসন পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনুন্নয়ন ব্যয় যতটা ধরা হয় তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। প্রকল্প পূর্ব নির্ধারিত সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পাবার জন্য প্রশাসনের সক্ষমতার অভাব তথা দক্ষতা ও মুনকার (দুর্নীতি) কে বিশেষভাবে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি উন্নতির দিক নির্দেশনা তেমন থাকে না।
বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক, অস্থির, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষিত হয়েছিল। এ তিনটি বাজেটে করোনা অতিমারী মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও প্রণোদনাকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের অন্যতম উদ্দেশ্য সামনে রাখা হয়েছিল। এসব বাজেটের মৌলিক অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম ছিল করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন নীতি কৌশলের সঠিক বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো যথা-মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মধ্য মেয়াদী নীতি কৌশল কঠোরভাবে পরিপালনসহ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, রফতানি খাত, আবাসন খাত, প্রবাসী আয় ও সেবাখাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নেওয়ার অঙ্গীকার, দারিদ্র নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং আয় বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ সূচক ও চলকগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নে কঠোরভাবে পরিপালনসহ নজরদারিতে রাখতে হবে।
কোন ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ নতুন করারোপ ছাড়াই আগামীর বিশাল এবং উচ্চাভিলাসী বাজেট প্রত্যেক মাসে আনুপাতিক হারে সততা ও আন্তরিকতার সাথে সঠিক অর্থে ও মানসম্মতভাবে বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি, অবকাঠামো ঘাটতি হ্রাস এবং শ্রমজীবী বান্ধব, দরিদ্র বান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক ব্যয় ইত্যাদির মাধ্যমে জনকল্যাণে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।
বাজেটের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে সারা বছরের আর্থিক কর্মকাণ্ডগুলো মাসিক কিংবা ত্রৈ-মাসিকের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে মানসম্মত বাস্তবায়নের ওপর। কেননা বিগত বছরগুলোতে বাজেট অবাস্তবায়নের হার প্রায় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, ব্যবসা ব্যয় হ্রাস, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচন ও শ্রমজীবী ব্যাপক মানুষের অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামীর বাজেটে সামাজিক, ভৌত অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দিতে হবে। তবে ব্যয়ের গুণগত মান, বাস্তবায়ন সময়, মোট প্রকল্প ব্যয় ইত্যাদির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে, সঠিক ব্যয়ে সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুণে ও মানে প্রকল্প সমাপ্তির জন্য সঠিক মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রণোদনার বিষয়ে বলতে হয়, শ্রমজীবী নিম্র আয়ের মানুষ, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায়ীদের কোভিড অতিমারীর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য রফতানিমুখী দেশীয় এবং আমদানী পরিপূরক শিল্প ও ব্যবসায়ের সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনার প্রবর্তন, শুল্ক হ্রাস, রাজস্ব প্রণোদনাসহ বিভিন্ন নীতি কৌশলের সহায়তা বাজেটে সুস্পষ্ট হতে হবে।
বস্ত্রখাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম। তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। পোশাক শিল্পে আমাদের দেশে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মচারী নিয়োজিত যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে থাকে। অথচ এ দেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে অবহেলিত ও নির্যাতিত। ন্যূনতম মজুরির ভিত্তিতে মালিকপক্ষ ও সরকারি লোকেরা তাদের কাছ থেকে অধিক শ্রম গ্রহণ করে থাকে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে অধিকার বঞ্চিত এসব পোশাক শ্রমিক অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের জন্য তাদের শ্রম নিয়োজিত করেছেন। এসব শ্রমিক যখন তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে সংঘবদ্ধ হন তখন তাদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়।
গত এক দশকে প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যঞ্জক হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের চাপে জর্জরিত বাংলাদেশ। শ্রমজীবীরা কাজ পাচ্ছে না। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে বিদ্যমান কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ। একইভাবে ঘোষিত বাজেটগুলোতে রাজস্ব ঘাটতি এবং অর্থায়নও বড়ো ধরনের সমস্যা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যম কর্মক্ষম জনশক্তি। আর এই প্রবৃদ্ধির ভক্ত জনগণ। যদি জনগণের জীবনমান উন্নয়ন না হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও শ্রমজীবীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র শ্রেণি তোষণ, ক্ষমতাবান্ধব ও অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করা যাবে না।
অর্থনীতির ভিত টেকসই করতে হলে অভ্যন্তরীণ কৃষি, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধিসহ ক্রমেই আমদানি কমানোর বিষয়টি মাথায় নিতে হবে। বিদেশী ঋণের বোঝা যাতে না বাড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। দ্রুততম সময়ে রফতানি বৈচিত্রকরণ ও বিদেশে বাজার সম্প্রসারণের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। শুধু তৈরি পোষাকসহ গুটিকয়েক পণ্যের ওপর নির্ভর না করে আরো বেশি কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যসহ নতুন নতুন রফতানি পণ্যের সমারোহ ঘটাতে হবে। আসন্ন বাজেটে এসব বিষয়ের প্রতিফলন থাকা চাই। এবারের বাজেট প্রণয়ের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানো, বৈষম্য হ্রাস ও নিত্যপণ্যের দাম প্রান্তিক মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
কাল্পনিক রাজস্ব আয় বা কাল্পনিক প্রবৃদ্ধি নয় বরং কর্মসংস্থান বান্ধব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ ও শ্রমজীবী অসহায় মানুষের কল্যাণে জনমুখী বাজেট সময়ের সবচেয়ে বড়ো দাবি। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও শ্রমজীবীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র শ্রেণি তোষণ, ক্ষমতাবান্ধব ও অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করা যাবে না। নতুন বাজেট হতে হবে অবশ্যই উৎপাদনশীল ও গণমুখী।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ব্যাংকার