• প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result
No Result
View All Result
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result

গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও শ্রমিক অধিকার

আলী আহমাদ মাবরুর

skalyanad by skalyanad
অক্টোবর ২৪, ২০২৩
in আর্কাইভ, গ্যালারি, ছবি, প্রবন্ধ/নিবন্ধ
0
গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও শ্রমিক অধিকার
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

ঢাকার কাছেই সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে মোট ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হয় ও ২০০ জনের অধিক আহত হয়। ভয়ানক এই দুর্ঘটনায় ঐ পোশাক কারখানার নয়তলা ভবনের ছয়তলা ভস্মীভূত হয়ে যায়। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাক শ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের। এটি দেশের ইতিহাসে কারখানায় সবচেয়ে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

তাজরিন ফ্যাশনসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১১ সালের মে মাসে ওয়ালমার্টের একজন এথিকাল সোর্সিং অফিসার ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ মর্মে ‘কমলা’ গ্রেড দিয়ে কারখানাটি পতাকাঙ্কিত করেন। ওয়ালমার্ট তখন আরও জানিয়েছিল, দুই বছর মেয়াদে তিনটি ‘কমলা’ গ্রেড মূল্যায়ন পাওয়া যে কোনো কারখানা এক বছরের জন্য ওয়ালমার্ট থেকে কোন অর্ডার পাবে না। তাজরিন ফ্যাশন কমলা রেটিং এই প্রথম পায়। ২০১১ সালের আগস্টে ‘হলুদ’ মাঝারি ঝুঁকির রেটিং পায়। এ প্রেক্ষিতে ওয়ালমার্ট তাজরিনের সাথে তার সম্পর্কের ইতি টানে ও জানায় যে “আশুলিয়াস্থ তাজরিন কারখানাটি ওয়ালমার্টের পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করার জন্য অনুমোদিত নয়।”

কিন্তু ওয়ালমার্টের অফিসিয়াল অনুমোদন ছাড়াই তাদেরই এক সরবরাহকারী গোপনে তাজরিনের সাথে সাবকন্ট্রাক্ট করে। অনেক সমালোচক দাবি করেন, ওয়ালমার্ট তাজরিনের সাথে হওয়া গোপন এই সাব-কনট্রাক্টের বিষয়টি জানতো। ইমেলের মাধ্যমে পাওয়া নথিগুলিতে দেখা যায় যে তাজরিন কারখানার মাধ্যমে ওয়ালমার্ট একাধিক পোশাক উৎপাদনের আদেশের অধীনচুক্তি করেছিল।

অগ্নিকাণ্ডের পরও তাজরিন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন কারখানার কাজের পরিবেশ ভালো ছিলো বলে দাবি করেন ও বলেন যে “এটা আমার কর্মীদের এবং আমার কারখানা জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। আমার সাতটি কারখানার মধ্যে এই প্রথম কোন কারখানায় আগুন লাগল।” অগ্নিকাণ্ডের তদন্তকারী সংস্থা জানায়, ২০১২ সালের জুনে কারখানার আগুনের নিরাপত্তার সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফৌজদারি অবহেলার অভিযোগে ২৮ নভেম্বর কারখানার তিনজন কেয়ারটেকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বের হওয়ার পথে তালা দিয়ে শ্রমিকদের ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাদের অভিযুক্ত করে। দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে যাওয়া এক শ্রমিক মোহাম্মদ রিপু তখন জানিয়েছিলেন, কারখানা ব্যবস্থাপক তাদেরকে বলেছিলেন, “আগুন লাগার এলার্ম নষ্ট হয়ে গেছে। কাজে ফিরে যাও।”

এই ঘটনার পর হাজার হাজার বাংলাদেশী গার্মেন্টস কর্মী বিক্ষোভ মিছিল করে। তাাঁরা কর্মসংস্থানে নিরাপত্তার জন্য আহ্বান জানায়। এই বিক্ষোভ তিন দিন ধরে চলে এবং একটি প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। বিক্ষোভের সময় দুই শতাধিক কারখানার মালিক তাদের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। কারখানার মালিকরা কারখানার অভ্যন্তরীণ সরঞ্জামগুলি রক্ষা করতে তালা লাগিয়েছেন জানান। এছাড়া, সরকার নিহতদের স্মরণে ২৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়।

মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। ভোর ৫টা ৫৫ মিনিট। রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখায় কারখানার মধ্যে পুড়ে মারা যান ৪১ জন। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। শুধু টাম্পাকো ফয়েলস কারখানা নয়, গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় ছোট-বড়ো মিলিয়ে কয়েক হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় ৫ হাজার ৮৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প কলকারখানা।

দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ড বা অন্য যে কোনা দুর্ঘটনার পরপরই আমরা এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যদিও অনেকক্ষেত্রেই এসব কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখেও কখনো আসে না। আর এ সুযোগে দোষারোপের সংস্কৃতির অনুশীলন হয়। দোষারোপের মাঝেই আবার রাজনীতিও শুরু হয়ে যায়। কেউ বা মালিকপক্ষ কেউ বা শ্রমিকদের গাফলতি আবার কেউ অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে আসেন। অথচ এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি মহলেরই যে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে এবং প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে, এ সত্যটি অনেকক্ষেত্রেই আমরা মানতে চাই না বা এড়িয়েও যাই। আর পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে এই জরুরি ইস্যুতে ইসলামেরও খুবই স্বতন্ত্র ও বলিষ্ঠ অবস্থানও রয়েছে।

ইসলাম হলো শান্তি ও মানবকল্যাণের ধর্ম। রাসুল (সা.) কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে। ইসলাম শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষসহ সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়। পার্থিব এ দুনিয়ার হিসেবে কেউ হয়তো মালিক আর কেউ বা শ্রমিক। কিন্তু তাই বলে শ্রমিকদের ওপর খবরদারি করার কোনো সুযোগ মালিকের নেই। মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকদেরকে নিজের ভাই ও বোনের মতোই গণ্য করা এবং সেভাবেই আচরণ করা। মালিকের অনেক দায়িত্বের মাঝে একটি দায়িত্ব হলো শ্রমিকদের অধিকার পূরণ করা। আল কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তারা কী আপনার রবের রহমত বণ্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার রবের রহমত থেকে তা উত্তম” (সুরা যখরুফ: ৩২)।

মালিকপক্ষ প্রাথমিকভাবে যে কাজটি করতে পারেন তাহলো, তারা শ্রমিকদেরকে সময়মতো ন্যায্য পারিশ্রমিকটি প্রদান করতে পারেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরি দাও” (ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩)। তবে মালিকের দায়িত্ব শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। রাসুল (সা.) মালিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “তোমাদের অধীনস্তরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির তুলনায় কঠিন কোনো কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা করো” (বুখারি: ২৫৪৫)।

রাসুল (সা.) শুধু এগুলো বলেই ক্ষান্ত হননি বরং তার আচরণেও এই মহানুভবতার নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। তিনি নিজে মেঝের ওপর বসে তারই খাদেম আনাস বিন মালেক (রা.) এর সাথে খাবার গ্রহণ করেছেন। আনাস বিন মালেক (রা.) দীর্ঘ ১০ বছর নবিজি (সা.) এর খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। পরবর্তীতে আনাস (রা.) বলেন, তিনি যে দীর্ঘ সময় নবিজি (সা.) এর সান্নিধ্যে ছিলেন, এর মধ্যে একদিনও তাকে কোনো কিছুর জন্য ভৎর্সনা বা তিরস্কার করেননি। আনাস (রা.) বলেন, আমি যদি কোনো কাজ করে তাকে জানাতাম, তাহলে কাজটি কীভাবে করলাম তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামাননি। আমাকে বকুনিও দেননি। আর যদি আমি দায়িত্ব দেয়ার পরও কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হতাম তাহলেও তিনি আমার ব্যর্থতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন তুলেননি। আমি আদবে, শিষ্টাচারে ও উন্নত ব্যবহারে তার মতো আর কাউকে পাইনি।”

নবিজি (সা.) এর সুন্নাহ’র সাথে মিলিয়ে আমাদের সমাজের কথা ভাবলে আসলেই অবাক ও শোকাহত হতে হয়। যদিও আমাদের এখানে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সিংহভাগই মুসলিম; অথচ ইসলাম নির্ধারিত শ্রম অধিকারের বিষয়ে কারোই যেন কোনো ধারনা নেই। আমাদের ঘর হোক, ছোটখাটো রেস্টুরেন্ট হোক কিংবা বড়ো কোনো কারখানা; সব জায়গাই আমরা শ্রমিকদেরকে অবহেলা করি এমনকী লাঞ্ছিতও করি। কয়েকদিন পরপরই পত্রিকার পাতায় গৃহকর্ত্রী বা গৃহকর্তার হাতে গৃহপরিচারিকার নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। হাতে, পায়ে পিঠে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে নিয়মিতভাবেই এসব পরিচারিকারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনেক সময়, প্রতিবেশীদের কাছে নির্যাতনের খবর পেয়েও কিছু বাসায় বন্দী দশা থেকে গৃহপরিচারিকাদের উদ্ধার করা হয়।

ইসলাম যেখানে বাসার অধীনস্তদের একই ধরনের খাবার বা পোশাক দেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে, সেখানে বাস্তবে এমন দৃশ্য যেন ক্রমাগত হারিয়েই যাচ্ছে। এখনো আমাদের বাসাবাড়িগুলোতে মাস গেলে গৃহপরিচারিকাদের যে বেতন দেয়া হয় তা বর্তমান বাজার মূল্যের হিসেবে যথেষ্ট নয়। বাসার গৃহপরিচারিকাদের সপ্তাহান্তে একদিন বন্ধ পাওয়া প্রাপ্য হলেও কার্যত এর তেমন কোনো নজির সমাজে দেখা যায় না। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও অনেক বাসায় মানুষকে কাজ করতে দেখা যায়। গৃহপরিচারিকারা ছুটির জন্য আবেদন করলে তাদের সেই আবেদন অধিকাংশ সময়ই অগ্রাহ্য করা হয়। ছুটির আবেদনকে রীতিমতো বিলাসী আবদার হিসেবেও রসিকতা করা হয়। পরনের কাপড় পুরনো হলেই কেবল এই অধীনস্তদের দেওয়া যায়-এমন মানসিকতা অনেকের মাঝে এখনো বিদ্যমান। আর খাবারের ক্ষেত্রেও পুরনো ও বাসি খাবারই যেন বুয়াদের পাওনা, এমনটা আমরা নিজেরাই যেন নির্ধারণ করে নিয়েছি।

মানুষকে হেয় করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কিংবা অধীনস্ত শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে গণ্য করার মানসিকতা তৈরি না হলে শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হওয়া অনেকটাই অসম্ভব। এ কারণেই বাসা বাড়ি বলি কিংবা ফ্যাক্টরি সর্বত্রই শ্রমিকেরা শুধু বঞ্চিতই হয়। কারখানাগুলোতে আমরা শ্রমিকদেরকে দিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করায়। যিনি সক্রিয় বা কর্মঠ-মালিকপক্ষ যেন তাকে দিয়ে সর্বোচ্চ আর্থিক ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করে। অথচ অগ্নিকাণ্ডের যে ঘটনাগুলো শুরুতে তুলে ধরলাম, তাতে অনেকটাই স্পষ্ট যে অধিকাংশ কারখানাতেই শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়ার মতো নিরাপদ পরিবেশ নেই। শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ড যদি নাও হয়, তাহলেও বিষাক্ত গ্যাস ও কেমিকেলের প্রভাবে অনেক শ্রমিকের আয়ুই দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। অথচ তাদেরকে এজন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। অস্বাস্থ্যকর পরিবশে কাজ করার জন্য বয়সের আগেই কাজে অক্ষম হয়ে পড়লেও তাদের পরিবারগুলো সাপোর্ট দেওয়ার মতো কোনো ভাতারও ব্যবস্থা নেই।

অনেক সময় এমনও হয় যে, শ্রমিকেরা ভালোমতো জানেও না যে, ঠিক কোন কাজের জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিংবা তাদেরকে এই কাজে কী কী সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে অথবা তাদের প্রাপ্য অধিকারই বা কী আছে। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সাথে চুক্তিই করেন না। আর করলেও সেই চুক্তিতেও বিস্তারিত তথ্যসমূহ দেওয়া থাকে না। আর শ্রমিকদেরও দায় আছে এই মর্মে যে, তারা নিজেদের প্রাপ্য হক বা অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। ফলে, তারা যে কর্মস্থলে ঠকে যাচ্ছেন বা প্রতারিত হচ্ছেন, এই ধারনাটিও অনেকের মাঝেই থাকে না।

শ্রমিকদের সাথে অবশ্যই চুক্তি হতে হবে এবং তা লিখিত ও স্পষ্ট হওয়াই কাম্য। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো” (মায়েদাহ: ১)। অন্যদিকে রাসুল (সা.) বলেন, “মুসলিমদের অবশ্যই সম্পাদিত চুক্তি মেনে চলতে হবে। যদি কোনো চুক্তিতে হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম না বানানো হয় তাহলে অবশ্যই সে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে” (তিরমিজি)।

আগুন নেভানোর সঠিক উপায় বা ঝুট কাপড় থাকলে কীভাবে আগুনের দ্রুত বিস্তার ঠেকানো যাবে তাও জানে না অনেকেই। পেছনের সিড়ি দিয়ে নামার কথা বলা হলেও অনেক কারখানায় পেছনের দিকে সিড়িও রাখা হয়নি। যে কয়েকটি কারখানায় আছে, সেগুলো বন্ধ অবস্থায় থাকে অথবা কাপড়ের বস্তা দিয়ে রাস্তাগুলো আঁটকানো থাকে। তাই অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেই দেখা যায় যে, আমাদের শ্রমিকেরা বেরিয়ে আসতে পারছে না।

মালিকদের অনেকের মাঝেই একটি ধারনা যে, তাদের শ্রমিকেরা খুব অলস এবং সুযোগ পেলেই কাজে ফাঁকি দেয়। আর এ কারণেই তারা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে মনোযোগী হয় না। সবদেশেই শ্রমিকদের কল্যাণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু যেহেতু বড়ো বড়ো অনেক কারখানার মালিকই শ্রমিকদের বিষয়ে ইতিবাচক মানসিকতা লালন করেন না, তাই তারা সবসময়ই সুযোগ খুঁজেন, যাতে আইনের ফাঁকফোকড় খুঁজে বের করা যায়। তারা টাকা বাঁচানোর জন্য শ্রমিকদের নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির বিষয়টিও এড়িয়ে যান। ফলে, তাজরীনের মতো দুর্ঘটনা ঘটে আর শ্রমিকেরা অসহায়ভাবে বলির পাঁঠা হয়ে যান। শুরুতেই যেমনটা লিখেছি, ওয়ালমার্টের বারবার সতর্কতার পরও তাজরীন কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি।

একই অবস্থা অন্য অনেক কারখানায়। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এখনো সব জায়গায় বসানো নেই। আবার যেসব কারখানায় এগুলো আছে, তার অনেকগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। তাছাড়া শ্রমিকরা জানেও না কীভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। কারণ তাদেরকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। আগুন লাগলে কী করতে হবে, তার মহড়ার আয়োজন করা হয়নি অনেক জায়গাতেই। আগুন নেভানোর সঠিক উপায় বা ঝুট কাপড় থাকলে কীভাবে আগুনের দ্রুত বিস্তার ঠেকানো যাবে তাও জানে না অনেকেই। পেছনের সিড়ি দিয়ে নামার কথা বলা হলেও অনেক কারখানায় পেছনের দিকে সিড়িও রাখা হয়নি। যে কয়েকটি কারখানায় আছে, সেগুলো বন্ধ অবস্থায় থাকে অথবা কাপড়ের বস্তা দিয়ে রাস্তাগুলো আঁটকানো থাকে। তাই অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেই দেখা যায় যে, আমাদের শ্রমিকেরা বেরিয়ে আসতে পারছে না। জেনারেটরের সংযোগ বা শর্ট সার্কিট নিয়মিত পরীক্ষা করার কথা বলা হলেও সেখানেও আমাদের অপারগতা রয়ে গেছে। ফলে, বারবার একইভাবে আগুন লাগছে আর একইভাবে আঁটকা পড়ে শ্রমিকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও একই রয়ে গেছে।

গার্মেন্টসসহ আমাদের অন্য সব কারখানারও আরেকটি নিদারুণ বাস্তবতা হলো শিশু শ্রমিক নিয়োগ। এটি জাতির জন্য লজ্জার। তাজরীনের মতো দুর্ঘটনাগুলোতে ভিকটিম হিসেবে যখন শিশুদের নাম উঠে আসে, তখন জাতি হিসেবে আমরা সবাই মর্মাহত হই, অপমানিত হই। কেমিকেল কারখানাগুলোর বিষাক্ত পরিবেশেও যে পরিমাণ শিশু শ্রমিক কাজ করে তা নজিরবিহীন। আমরা এ কাজগুলো করে শুধুমাত্র দেশের প্রচলিত আইন বা জাতিসংঘের স্বীকৃত শ্রম অধিকারই লঙ্ঘন করছি না, বরং ইসলামের অনুপম শিক্ষাও অগ্রাহ্য করছি। কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এবং শ্রমিকদের অধিকারগুলো অগ্রাহ্য করে আমরা প্রকারান্তরে ইসলামের শিক্ষাকেই অস্বীকার করছি। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন তো মাত্র কয়েক বছর আগে প্রণীত হয়েছে। অথচ ১৫শ বছর আগে, যখন ক্রীতদাস প্রথার অবাধ প্রচলন ছিল, সেই যুগেই ইসলাম শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাই ইসলামের অনুসারীরা মুসলিম শ্রম আইন জানবেন না বা ইসলাম নির্দেশিত শ্রম অধিকার অগ্রাহ্য করবেন, তা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন।

আমাদের যার ওপরই যে দায়িত্ব আছে তা পালন না করলে দুনিয়াতে ফাঁকি দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে কিন্তু রোজ হাশরের দিনে আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সেদিন আমাদেরকে জবাবদিহি করতেই হবে। আমরা সবাই ইসলামের শ্রম আইনগুলো জানার এবং নিজেদের পরিমণ্ডলে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য তা নিশ্চিত করতে তৎপর হই। আল্লাহ পাক আমাদের সাহায্য করুন। শ্রমিক বান্ধব মানসিকতা দান করুন। আমিন।

লেখক: সাহিত্যক ও প্রাবন্ধিক

Previous Post

অর্থকরী ফল আম ও শ্রম বাজার

Next Post

জনগণ আজ অধিকার বঞ্চিত : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

Next Post
জনগণ আজ অধিকার বঞ্চিত : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

জনগণ আজ অধিকার বঞ্চিত : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সর্বশেষ সংযোজন

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

by skalyanad
এপ্রিল ১৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী ভাইবোনদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে। আসন্ন...

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

by skalyanad
এপ্রিল ৮, ২০২৪
0

দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষ, দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।...

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

by skalyanad
মার্চ ২৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষরা সর্বক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত। তাদের অধিকার আদায়ের...

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৭, ২০২৪
0

আসন্ন ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য রাষ্ট্র ও মালিকদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার...

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৬, ২০২৪
0

এদেশের শ্রমজীবী মানুষের সস্ত্রশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ শ্রমজীবী মানুষরা পায়নি। রাজনৈতিক বিভেদ স্বাধীনতাকে...

  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
  • সাংগঠনিক কাঠামো
  • শাখা সংগঠন
  • ট্রেড ইউনিয়ন
  • সংবাদ
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
  • প্রকাশনা
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
  • যোগাযোগ

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.

Design and Developed by Bijoylab IT| Contact:+01818 650864
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.