১। প্রশ্ন: অংশগ্রহণ তহবিলে কোম্পানি মুনাফার কত শতাংশ জমা করতে হয়?
উত্তর: শ্রম আইন ২০০৬ সালের ধারা ২৩৪ উপধারা ১ এর (খ) বলা হয়েছে, মালিক প্রত্যেক বৎসর শেষ হওয়ার অন্যূন নয় মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরের নীট মুনাফার পাঁচ শতাংশ (৫%) অর্থ ৮০ : ১০ : ১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা করবে। অর্থাৎ কোম্পানির মোট মুনাফা বা লাভের ৫% শতাংশের নিম্নোক্ত হারে বণ্টিত হবে, অংশগ্রহণ তহবিলে ৮০ শতাংশ কল্যাণ তহবিলে ১০ শতাংশ, এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ১০ শতাংশ।
২। প্রশ্ন: অংশগ্রহণ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০০৬ সালের ২৩৫ ধারার ১ নং উপধারায় তহবিলের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। (ক) কোম্পানির যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য এবং এইরূপ কোনো প্রতিনিধি না থাকিলে কোম্পানির শ্রমিকগণ কর্তৃক তাদের নিজেদের মধ্যে হতে নির্বাচিত ২ জন সদস্য, এবং (খ) কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য, যাদের মধ্যে অন্তত ১ জন হবেন কোম্পানির হিসাব শাখা হতে মনোনীত ব্যক্তি।
৩। প্রশ্ন: অংশগ্রহণ তহবিলের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য একজন শ্রমিকের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৪১ ধারায় সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্যতার বিষয়টি বলা হয়েছে। ২৪১ ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে সকল (সুবিধাভোগী) এই অধ্যায়ের অধীন সকল সুবিধা (সমান অনুপাতে) পাওয়ার এবং তহবিলদ্বয়ে অংশগ্রহণের যোগ্য হবেন। ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে কোনো হিসাব বৎসরে কোনো (সুবিধাভোগী) কোনো কোম্পানিতে অন্যূন ৬ মাস চাকরি পূর্ণ না করিলে তিনি উক্ত বৎসরের জন্য তহবিলদ্বয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
৪। প্রশ্ন: অংশগ্রহণ তহবিলের সুবিধাভোগী কারা হবেন?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০০৬ সালের ২৪২ ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক বৎসর অংশগ্রহণ তহবিলে জমাকৃত মোট অর্থের দুই-তৃতীয়াংশ সমান অনুপাতে সকল (সুবিধাভোগীগণের) মধ্যে নগদে বণ্টন করা হবে এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ধারা ২৪০ (১১) এর বিধান মোতাবেক বিনিয়োগ করা হবে। যার মুনাফাও সকল (সুবিধাভোগীগণের) মধ্যে সমান অনুপাতে বণ্টন করা হবে।
২ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো (সুবিধাভোগী) স্বেচ্ছায় কোম্পানির চাকরি ত্যাগ করে চলে যান, তা হলে এই অধ্যায়ের অধীন তহবিলদ্বয় হতে তাকে কোনো সুবিধা প্রদেয় হলে তা তিনি পাবেন।
৩ নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো (সুবিধাভোগীর) চাকুরি, বরখাস্ত ব্যতীত, অন্য কোনোভাবে অবসান করা হলে, তিনি কোম্পানির চাকুরি হতে অবসরপ্রাপ্ত কোনো (সুবিধাভোগীর) সমতুল্য হবেন।
৪ নং উপধারায় বলা হয়েছে কোনো (সুবিধাভোগী) চাকুরি হতে বরখাস্ত হলে, তহবিলদ্বয়ে তার অংশ বাজেয়াপ্ত হবে।
৫ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোনো (সুবিধাভোগী) কোনো কোম্পানির কোনো অফিস বা ইউনিট হতে অন্য কোনো অফিস বা ইউনিটে বদলি হন, সে ক্ষেত্রে তার নামে জমাকৃত তহবিলদ্বয়ের সুবিধা উক্ত বদলিকৃত অফিসে বা ইউনিটের তহবিলদ্বয়ে স্থানান্তরিত হবে এবং তার পূর্বের অফিস বা ইউনিটের চাকুরি তার বদলিকৃত অফিস বা ইউনিটের তহবিল হতে প্রদেয় সুযোগের ক্ষেত্রে গণনায় আনা হবে।
৬ নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো (সুবিধাভোগীর) অবসর গ্রহণের পর তিনি, অথবা কোম্পানিতে চাকুরিরত থাকাকালে তার মৃত্যু ঘটিলে তার মনোনীত স্বত্ত্বভোগী, এই অধ্যায়ের অধীন পূর্ণ সুবিধা ভোগ করবেন।
৫। প্রশ্ন: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল কিভাবে গঠিত হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৬৪ ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান তার শ্রমিকগণের সুবিধার জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল গঠন করতে পারবে। শ্রম আইনের ২৬৪ ধারার ১০ নং উপধারায় বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানে উহার শ্রমিকগণের সুবিধার জন্য ভবিষ্যৎ তহবিল গঠন করতে বাধ্য থাকিবে যদি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্যূন তিন-চতুর্থাংশ শ্রমিক মালিকের নিকট লিখিত দরখাস্ত পেশ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল গঠনের দাবি করেন। ১১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যেক্ষেত্রে উপধারা (১০) এর অধীন ভবিষ্যৎ তহবিল গঠনের দাবি করা হয়, সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিক দরখাস্ত প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে এটি গঠনের জন্য ধারা ৩ এর অধীন প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করবেন এবং ভবিষ্যৎ তহবিল উক্ত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই চালু করবেন।
৬। প্রশ্ন: প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল কীভাবে পরিচালিত হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৬৪ ধারায় ৪ নং উপধারায় বলা হয়েছে ভবিষ্যৎ তহবিল একটি ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। ৫ নং উপধারায় বলা হয়েছে উক্ত ট্রাস্টি বোর্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং এতে নিযুক্ত শ্রমিকগণের সমান সংখ্যক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তি এর চেয়ারম্যান হবেন।
৭। প্রশ্ন: প্রভিডেন্ট ফান্ডে শ্রমিকের চাঁদার পরিমাণ কত হবে এবং মালিক কত শতাংশ টাকা প্রদান করবেন?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৬৪ ধারার ৯ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল গঠন করা হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক স্থায়ী শ্রমিক উহাতে তার চাকরি ১ বৎসর পূর্ণ করিবার পর প্রত্যেক মাসে উহার ভবিষ্যৎ তহবিলে ভিন্নরূপ কোনো চুক্তি না থাকিলে তার মাসিক মূল মজুরির অন্যূন ৭ শতাংশ এবং অনধিক ৮ শতাংশ হারে চাঁদা প্রদান করবেন এবং মালিক এতে উক্ত হারে টাকা প্রদান করবেন।
৮। প্রশ্ন: প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিলের হিসাব কীভাবে পরিচালিত হবে?
উত্তর: ২০১৫ সালের বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার ২৫২ ধারায় তহবিলের হিসাব পরিচালনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
১.তহবিলে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ সচিব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত তফসিলি ব্যাংকে ভবিষ্যৎ তহবিল হিসাব নামের একটি ব্যাংক হিসাব খুলে এতে জমা করবেন।
২.ব্যাংক হিসাব ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মালিক পক্ষের প্রতিনিধি ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি সমন্বয়ে যৌথভাবে পরিচালিত হবে এবং টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অন্য একজন সদস্যের যৌথ স্বাক্ষর থাকতে হবে।
৩.প্রত্যেক সদস্যের হিসাব মালিক ও শ্রমিকের চাঁদাসহ জমাকৃত অর্থ ও অর্জিত মুনাফা বা লাভ পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করে রেজিষ্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
৯। প্রশ্ন: শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল হতে অনুদান পাওয়ার পদ্ধতি ও পরিমাণ কত?
উত্তর: শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের ধারা ৫ এর অধীন ফাউন্ডেশনের তহবিল হতে নিম্নবর্ণিত খাতে অনুদান প্রদান করা হয়,
(ক) শিক্ষা বৃত্তি
(খ) যৌথ বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ
(গ) চিকিৎসা সাহায্য প্রদান
(ঘ) দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
(ঙ) অক্ষম বা অসমর্থ শ্রমিককে সাহায্য প্রদান
(চ) দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার পরিবারকে সাহায্য প্রদান
(ছ) শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য প্রদান; এবং
(জ) মাতৃত্ব কল্যাণ
(২) উপ-বিধি (১) উল্লিখিত অনুদান বা অর্থ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
১০। প্রশ্ন: শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল হতে অনুদান পাওয়ার সময়সীমা কতদিন থাকে?
উত্তর: ২০০৬ সালের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের ধারা ৬ এ ফাউন্ডেশনের তহবিল হতে অনুদান পাওয়ার সময়সীমা কতদিন তা আলোচনা করা হয়েছে। (১) দুর্ঘটনার কারণে কোনো শ্রমিকের জখমপ্রাপ্ত হলে অথবা অসুস্থ হলে বা মৃত্যুবরণ করলে উক্ত জখমপ্রাপ্তি, অসুস্থতা বা মৃত্যুবরণের তারিখ হতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নিজে অথবা, ক্ষেত্রমতে, তার আইনগত উত্তরাধিকারী মহাপরিচালকের নিকট অনুদানের অর্থ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে পারবেন। (২) উপবিধি (১) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে আবেদন করা না হলে যুক্তিসঙ্গত কারণ উল্লেখপূর্বক পরবর্তী ২১ (একুশ) দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং বিলম্বের কারণ বিবেচনা করে মহাপরিচালক উক্ত আবেদন গ্রহণ করতে পারবেন।
লেখক: নির্বহী সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা