ঐক্যই শক্তি, সংগঠিত মানুষই শক্তিশালী মানুষ এই স্লোগানের ভিত্তিতেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হয়।
ট্রেড ইউনিয়নের সংজ্ঞা: শ্রমিক কর্মচারীর সঙ্গে মালিক বা ব্যবস্থাপক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ ও বৈধ করার উদ্দেশ্যে শ্রমিক কর্মচারী অথবা মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দ্বারা গঠিত সংঘ বা সংস্থাকে ট্রেড ইউনিয়ন বলে।
ট্রেড ইউনিয়ন ৪ প্রকার:
১. বেসিক ইউনিয়ন: (ক) প্রাতিষ্ঠানিক (খ) অপ্রাতিষ্ঠানিক /প্রাতিষ্ঠানিক পুঞ্জ ।
২. পেশাভিত্তিক ফেডারেশন/ ক্র্যাফট ফেডারেশন । একই প্রকারের শিল্পে বা পেশার কমপক্ষে ৫টি বেসিক ইউনিয়ন মিলে পেশা ভিত্তিক ফেডারেশন গঠিত হয়।
৩. জাতীয় ফেডারেশন। বিভিন্ন পেশার ২০ বা ততোধিক ট্রেড ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনকে জাতীয় ফেডারেশন বলা হয়।
৪. কনফেডারেশন। ১০টি জাতীয় ফেডারেশন নিয়ে কনফেডারেশন গঠিত হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন: শিল্প বিকাশের গোড়ার দিকে যখন মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল তখন এই দুপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপনের জন্য কোনো সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। কিন্তু আধুনিক যুগে কলকারখানা/শিল্প ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়টি অনুপস্থিত এবং মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্কটি টানাপোড়নে সংকটপূর্ণ। শ্রম শক্তির ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যকার স্বার্থে দ্ব›দ্ব ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রসার ঘটেছে। ১৮৯০ সালে ভারতে প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হয়। বোম্বে মিল হ্যান্ডস। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন করার সাথে সাথে আপনি আইনের আওতায় চলে আসলেন। যথাযথ ভাবে তালিকাসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিবেন। ট্রেড ইউনিয়নের জন্য একটি বড়ো কাজ হলো গঠনতন্ত্র তৈরি করা। এই গঠনতন্ত্র ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য একটি আইন ও পদ্ধতি।
রিটার্ন দাখিল:
১.শ্রম আইন ২০০৬ এর ২০১ নং ধারা অনুযায়ী বিধি ১৭৬ (১) এর অধীনে ইংরেজি বছর শেষ হওয়ার পর
পরবর্তী বছরের ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে উক্ত বছর সংক্রান্ত ট্রেড ইউনিয়নের আয়-ব্যয় এবং সম্পদ ও দায়ের হিসাব সম্বলিত একটি সাধারণ বিবরণী বিধি ৬১ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রস্তুত ও নিরীক্ষণ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর দিয়ে শ্রম পরিচালকের নিকট প্রেরণ করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নে পাঁচশত সদস্য হলে নিরীক্ষণ করতে হবে এবং কম সংখ্যক সদস্য হলে নিরীক্ষণ করতে হবে না। বেসিক ইউনিয়ন ১ বছর অন্তর, দেশ ভিত্তিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশন ২ বছর অন্তর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
২.যে বছরের রিটার্ন দাখিল করা হবে, সেই বছরের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের সকল পরিবর্তন প্রদর্শন করে
একটি বিবরণী ও গঠনতন্ত্রের ১টি কপি শ্রম পরিচালকের নিকট প্রেরণ করতে হবে। পুরাতন ও নতুন কার্যকরী কমিটির তালিকা শ্রম অধিদপ্তরে পেশ করতে হবে।
৩.ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের তালিকা ও চাঁদা আদায়ের তালিকা প্রেরণ করতে হবে।
৪.ট্রেড ইউনিয়নটি কোন ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত তা রিটার্নে উল্লেখ থাকতে হবে।
৫.যদি কোন ট্রেড ইউনিয়ন উপধারা (১) এ উল্লিখিত সময় সীমার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে
শ্রম পরিচালক নোটিশ দ্বারা উক্ত ট্রেড ইউনিয়নকে অবহিত করবে। উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে যদি ট্রেডে ইউনিয়নটি রিটার্ন দাখিল করিতে পুনরায় ব্যর্থ হয় তা হলে উক্ত ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করতে পারবে।
৬.রেজিস্ট্রেশন আবেদন ও বার্ষিক রিটার্ন দাখিল অনলাইনে করা যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে সকল কার্যক্রমের একটি
প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ করতে হবে।
রিটার্ন দাখিলে যা প্রয়োজন:
১.ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা সন ও তারিখ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং সদস্য সংখ্যা
২.সভা সমূহের কার্যবিবরণী
৩.আয়-ব্যয়ের হিসাব ও সম্পদ বিবরণী
রিটার্ন দাখিলের সময় নিম্নোক্ত ফরমগুলি পূরণ করতে হবে:
ফরম-৬১ (ক)
ফরম-৬১ (খ)
ফরম-৬১ (ঘ)
ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচন
ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২ বছর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক/প্রতিষ্ঠান পুঞ্জের ক্ষেত্রে ৩ বছর অন্তর নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কার্যকরী কমিটি একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবেন এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১টি নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচনী সাব কমিটি গঠন করবেন। পরবর্তীতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করিবেন।
সাধারণ সভার আহ্বান
১.নোটিশ প্রদান ৩০/৪৫ দিন পূর্বে।
২.নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন
৩.নির্বাচন কমিটি কর্তৃক নির্বাচন তফসিল ঘোষণা।
৪.নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা।
৫.ভোটার তালিকা হালনাগাদ।
৬.মনোনয়নপত্র বিলি।
৭.মনোনয়নপত্র জমা।
৮.মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই।
৯.মনোনয়নপত্র চূড়ান্তকরণ।
১০.প্রার্থীতা প্রত্যাহার।
১১.প্রতীক বরাদ্ধ।
১২.নির্বাচন পরিচালনা।
১৩.শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিতিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ।
১৪.সাধারণ সভার উপস্থিতিতে কোরাম হওয়া।
১৫.শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধির প্রতিবেদন পেশ।
১৬.নির্বাচন কমিশন স্বাক্ষরিত ফলাফল ঘোষণা।
নির্বাচন করতে না পারলে পূর্বের কমিটি বহাল থাকবে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।