• প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result
No Result
View All Result
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
No Result
View All Result

দাস প্রথার আধুনিক সংস্করণ গৃহ শ্রমিক

ড. মোঃ জিয়াউল হক

skalyanad by skalyanad
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
in আর্কাইভ, গ্যালারি, ছবি, প্রবন্ধ/নিবন্ধ
0
দাস প্রথার আধুনিক সংস্করণ গৃহ শ্রমিক
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

বহুপূর্বে পৃথিবী থেকে দাসপ্রথা বিলোপ হলেও বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে দাসপ্রথার আধুনিক সংস্করণ মনে করা হচ্ছে গৃহ শ্রমিককে। গৃহ শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন ও সামাজিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সময় এসেছে গৃহ শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদান এবং তাদের ওপর থেকে সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। অন্যথায় গৃহ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে।

গৃহ শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। এদের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ করা দরকার। গৃহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। আইএলও, বিভিন্ন দেশের জাতীয় জরিপের ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্বে ৫ কোটি ২৬ লাখ গৃহ শ্রমিক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও বেশি। কেননা অনেক দেশেই এ সংক্রান্ত যথাযথ হিসেব করা সম্ভব হয়নি। তবে সংখ্যা যাই হোক না কেন, সারাবিশ্বের গৃহ শ্রমিকের অবস্থায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এখন গৃহ শ্রমিক বিষয়টাকে একটু সরলভাবে যদি বলি তাহলে, আধুনিক শ্রমদাসত্বের একটি রূঢ় বাস্তবরূপ হচ্ছে বিশ্বের এই বিপুলসংখ্যক গৃহ শ্রমিক।

গৃহ শ্রমিক কারা : সাধারণভাবে গৃহ শ্রমিকের চাকুরির সম্পর্কের ভিত্তিতে মৌখিক বা লিখিত যে কোনো উপায়ে খণ্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীনভাবে স্বল্প মজুরিতে গৃহকর্মে নিয়োগকৃত ব্যক্তি বা কর্মীকে ‘গৃহ শ্রমিক’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। আরেকটু বললে গৃহকর্ত্রীকে গৃহস্থালির কাজেকর্মে সহায়তা করা, কোনো বাসা বা মেসে রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় কাজ করার জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিত্তিতে যে নারী, শিশু এমনকি পুরুষ নিয়োগপ্রাপ্ত হয় তাদের গৃহ শ্রমিক বলে।

গৃহ শ্রমিক বৃদ্ধির কারণ : বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রভৃতির কারণে ফসলহানি, কৃষিভূমি হ্রাস, বাড়ি-ঘর ধ্বংস এবং গ্রামে কাজের অভাবসহ নানাবিদ কারণে গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজের সন্ধানে শহরমুখী ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এইসব দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত এসব নারীর অধিকাংশই শহরে এসে সবচেয়ে সহজলভ্য গৃহশ্রমের কাজটিকে জীবিকার জন্য বেছে নেয়। ফলে ক্রমান্বয়ে গৃহ শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে গৃহ শ্রমিকদের বৈশিষ্ট্য : গৃহ শ্রমিকদের কতগুলো সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যথা কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ ও কর্মঘণ্টা নেই, কাজের কোনো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং নিরাপত্তা নেই, সুনির্দিষ্ট কোনো বেতন কাঠামো নেই, চাকুরির বিধিমালা নেই, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নেই, ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা ও পেশাগতভাবে সংগঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ ও অধিকার নেই, অধিকাংশেরই প্রতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই, পেশাগত নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার নেই।

গৃহ শ্রমিকের শ্রেণি বিভাগ : গৃহ শ্রমিকের শ্রেণি বিভাগ পূর্বের কোনো গবেষণায় কিংবা বই-পুস্তকে গৃহ শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি বিভাগ পাওয়া যায়নি। তবে গৃহ শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। যেমন বয়সকাঠামোর ভিত্তিতে গৃহ শ্রমিকদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা শিশু-কিশোর গৃহ শ্রমিক, মধ্যবয়সী গৃহ শ্রমিক, বৃদ্ধবয়সী গৃহ শ্রমিক। লিঙ্গের ভিত্তিতে গৃহ শ্রমিকদের দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা পুরুষ গৃহ শ্রমিক, নারী গৃহ শ্রমিক। কর্মস্থলের ভিত্তিতে গৃহ শ্রমিককে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা মালিকের বাসায় থেকে কর্মরত গৃহ শ্রমিক, মালিকের বাসার বাইরে থেকে কর্মরত গৃহ শ্রমিক, মেস বাড়িতে কর্মরত গৃহ শ্রমিক। সময়ের ভিত্তিতে গৃহ শ্রমিককে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা খণ্ডকালীন গৃহ শ্রমিক, পূর্ণকালীন গৃহ শ্রমিক।

গৃহ শ্রমিকদের নির্যাতনের কারণ ও ধরন : গৃহ শ্রমিকদের অপরাধ ও নির্যাতন-নিপীড়ন গৃহ শ্রমিকদের জন্য একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। গৃহ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্র মাঝে মধ্যে খুব সামান্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। সমাজের উচ্চশ্রেণি থেকে শুরু করে নিম্নশ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সকলেই গৃহ শ্রমিক নির্যাতনে সিদ্ধহস্ত। দেখা গেছে, কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া, ঘুম থেকে উঠতে দেরি করা, বাসন বা কাপ পিরিচ ভেঙে ফেলা, ডাকে সাড়া দিতে একটু দেরি করা, বেশিক্ষণ বাথরুমে থাকা, শব্দ করে কান্না করা, মিথ্যা চুরির অভিযোগ করা, গৃহকর্তা বা তাঁর ছেলের অশ্লীল ইঙ্গিতে সাড়া না-দেওয়া প্রভৃতি কারণে গৃহকর্ত্রী বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে গৃহ শ্রমিকদের নিগৃহীত বা নির্যাতিত হতে হয়।

গৃহশ্রমিকের ওপর যে নির্যাতন ও শাস্তি প্রদান করা হয়, সেগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা,

শারীরিক নির্যাতন : গৃহশ্রমিকদের ওপর যে ধরনের শারীরিক নির্যাতন হয় সেগুলো হলো, গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা, রড বা লাঠিপেটা, বেতের আঘাত, দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে মাথায় আঘাত, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া, নির্যাতনের পর বাথরুমে বেঁধে রাখা, হাত ও পা ভেঙে দেওয়া, নির্যাতনের পর শরীরে আগুন দেওয়া, চড় থাপ্পড়, লাথি, গোপনাঙ্গে মরিচ ভেঙে দেওয়া, বিবস্ত্র করে মুখ, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জখম, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অনৈতিক সম্পর্কের ফলে অন্তসত্ত্বা করে ফেলানো।

মানসিক নির্যাতন : গৃহ শ্রমিকদের ওপর যে ধরনের মানসিক নির্যাতন হয় সেগুলো হলো মাটির সানকিতে খেতে দেওয়া, রিক্সার পাদানিতে বসতে দেওয়া, রান্নাঘর, বারান্দায় শুতে দেওয়া, বাসি-পচা খাবার খেতে দেওয়া এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে একসাথে খেতে না-দেওয়া, টিভি দেখার সময় একই সাথে বসতে না-দিয়ে মেঝেতে বসতে দেওয়া, বাইরে বেড়াতে গেলে বাড়িতে তালা মেরে রেখে যাওয়া, কোনো কিছু হারালে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা, ভালো জামাকাপড় পরতে না-দেওয়া, অশালীন ও অমর্যাদাকর বাক্য ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত রাখা।

বাংলাদেশে গৃহ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আমরা যে সমীক্ষা লক্ষ্য করি তা ভয়াবহ। তাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ নানা প্রকার নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য মতে, ২০০৮ সালে সারাদেশে মোট ১২১ জন গৃহ শ্রমিক বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ জন শারীরিক নির্যাতন, ২৬ জন খুন, ১৮ জন ধর্ষণ, ১ জন গণধর্ষণ, ১০ জন ধর্ষণের পর খুন, ২ জন আত্মহত্যা করেছে, ১১ জন অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। মোট ১২১টি ঘটনার মধ্যে ৯৪টি ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় মোট ৭৭টি গৃহ শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। এদের মধ্যে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে, শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ২০ জনকে এবং নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করেছে ৮ জন গৃহ শ্রমিক। নাগরিক উদ্যোগের তথ্য সেলের সমীক্ষায় দেখা গেছে, জানুয়ারি ২০১১ থেকে জুন ২০১১ সময়ে সারাদেশে ৩৮ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী ও তাঁদের আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত এবং ছাদ থেকে পড়ে আহত হয়েছে ১৫ জন, শারিরীক নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। নির্যাতন সইতে না-পেরে ছাদ থেকে পড়ে এবং গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে ১১ জন। গৃহকর্তার অনৈতিক সম্পর্কে অন্তসত্ত্বা হয়েছে ২ জন। গৃহকর্ত্রীর আত্মীয়ের হাতে ধর্ষণচেষ্টার শিকার একজন এবং পুড়িয়ে মারা হয়েছে ৩ জনকে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিল্স)-এর হিসেব অনুযায়ী গত ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত দেশে ৬৪০ জন গৃহ শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৩০৫ জন, পঙ্গু হয়েছেন ২৩৫ জন, ধর্ষিত হয়েছেন ৭৭ জন এবং অন্যভাবে নিগৃহীত হয়েছেন ২৩ জন। এ নির্যাতনের চিত্রই আমাদের বলে দেয়, কতটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে গৃহশ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকরা।

গৃহ শ্রমিক সুরক্ষা আইন : আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি, সারাবিশ্বের অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমখাতের এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের কাজকে শোভনীয় করার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বয়ং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) গত ১ জুন ২০১১ তার শততম অধিবেশনে গৃহ শ্রমিকদের বিষয়টিকে প্রধানতম অ্যাজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করে এবং ১৬ জুন ২০১১ গৃহকর্মীর অধিকার রক্ষায় একটি যুগান্তকারী সনদ পাস করে। নতুন সনদে গৃহ শ্রমিকদের অন্যান্য শ্রমিকের মতোই অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ সনদ অনুযায়ী, গৃহ শ্রমিকদের সঙ্গে এখন থেকে লিখিত চুক্তি করতে হবে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন ছুটি দিতে হবে এবং বার্ষিক ও অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে তাদের নিয়োগকারীর বাড়িতে থাকতে হবে না। সনদ প্রণয়নে বাংলাদেশও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। প্রয়োজন শুধু অনুসমর্থন দানের। অনুসমর্থন না-করলে এ সনদের বিধিবিধান আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। বাংলাদেশ সরকার দ্রুতই এ সনদটি অনুসমর্থন করবে এবং গৃহ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের মানসম্মান সংরক্ষণে আরও তৎপর এবং উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কিছু বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গৃহ শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি জাতীয় ও শ্রমিক আন্দোলনের মতোই মানবাধিকার আন্দোলনেও খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গেও গৃহশ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায় ‘গৃহ শ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা ২০১০’ শীর্ষক একটি খসড়া নীতিমালা প্রণীত হলেও দীর্ঘ দিন যাবৎ তা গুরুত্বহীন অবস্থায় পড়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবে গৃহ শ্রমিকদের জন্য একটি সনদ প্রণীত হওয়া এবং সেখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় নিজের দেশেও একটি বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়নে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দায়িত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।

গৃহ শ্রমিকদের সমস্যা : গৃহশ্রমিকদের নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়- ১. কাজ হিসেবে গৃহশ্রমের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই; ২. গৃহশ্রমের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা নেই; ৩. দেশে প্রচলিত শ্রমআইনে গৃহশ্রমের বিষয়টি উপেক্ষিত; ৪. গৃহশ্রম বিষয়ে কোনো জাতীয় মানদণ্ড বা আচরণবিধি নেই; ৫. গৃহ শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়; ৬. গৃহশ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা নেই।

গৃহ শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে নিম্নলিখিত সুপারিশ করা হলো-

১. গৃহ শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;

২. গৃহশ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুনিশ্চিত ও সহজ করতে হবে;

৩. গৃহশ্রমের জন্য জাতীয় নীতিমালা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের হাতেই মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। এক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখতে হবে;

৪. গৃহশ্রমিকের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাৎসরিক ছুটি এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে সকলেই তাদের ধর্মীয় উৎসবের সময় তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে;

৫. গৃহ শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধ করা ও তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের প্রতি মানবিক ও সদয় আচরণ করতে হবে। গৃহ শ্রমিককে বাসায় আটকে রাখা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে;

৬. গৃহশ্রমকে উৎপাদনশীল শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;

৭. গৃহশ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বৃত্তিমূলক/কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;

৮. শিশু গৃহ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম, বিনোদন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে;

৯. গণমাধ্যমে গৃহ শ্রমিকদের গুরুত্ব ও অবদান স্বীকার করে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে;

১০. শিশু গৃহ শ্রমিকদের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, দারিদ্র্যের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী গৃহশ্রমিকের কাজ বেছে নিয়েছে কিন্তু কোনো দয়া ভিক্ষা করেনি। পরিশ্রম করে তবেই পারিশ্রমিক নিচ্ছে। কিন্তু তারপরও তারা প্রতিমুহূর্তে শিকার হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। যারা গৃহশ্রমিকের প্রতি বৈষম্য, শোষণ-নির্যাতন করে তারা কোনো পেশাদার অপরাধী নয়, বরং অনেকেই শিক্ষিত এবং সমাজে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পরিবারের সদস্য। দীর্ঘকাল ধরে গৃহ শ্রমিকদের ভিন্ন চোখে দেখা বা বৈষম্যমূলক আচরণের যে চর্চা আমাদের সামজে বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মানসিকতায় তারই প্রতিফলন প্রতীয়মান হয়। এদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং গৃহ শ্রমিকদের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। গৃহ শ্রমিকরা যাতে সমাজে মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে মানবিকভাবে বাঁচার অধিকার পায়। আমরা আর কোনো গৃহশ্রমিকের নির্যাতনের শিকার হয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরা দেখতে চাই না। কোনো নির্যাতিত গৃহশ্রমিকের আর্তনাদ শুনতে চাই না। আমরা চাই গৃহ শ্রমিক ও তাদের পেশার প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতি। আসুন আমরা গৃহ শ্রমিকদের দাস হিসেবে নয় বরং পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করি।

লেখক : সভাপতি, নাটোর জেলা, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

Previous Post

প্রশ্নোত্তরে মজুরি ও মজুরি বোর্ড

Next Post

ট্রেড ইউনিয়নের রিটার্ন দাখিল ও নির্বাচন

Next Post
ট্রেড ইউনিয়নের রিটার্ন দাখিল ও নির্বাচন

ট্রেড ইউনিয়নের রিটার্ন দাখিল ও নির্বাচন

সর্বশেষ সংযোজন

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

by skalyanad
এপ্রিল ১৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী ভাইবোনদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে। আসন্ন...

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

by skalyanad
এপ্রিল ৮, ২০২৪
0

দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষ, দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।...

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

by skalyanad
মার্চ ২৮, ২০২৪
0

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষরা সর্বক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত। তাদের অধিকার আদায়ের...

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৭, ২০২৪
0

আসন্ন ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য রাষ্ট্র ও মালিকদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার...

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন

by skalyanad
মার্চ ২৬, ২০২৪
0

এদেশের শ্রমজীবী মানুষের সস্ত্রশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ শ্রমজীবী মানুষরা পায়নি। রাজনৈতিক বিভেদ স্বাধীনতাকে...

  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
  • সাংগঠনিক কাঠামো
  • শাখা সংগঠন
  • ট্রেড ইউনিয়ন
  • সংবাদ
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
  • প্রকাশনা
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
  • যোগাযোগ

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.

Design and Developed by Bijoylab IT| Contact:+01818 650864
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সংগঠন
    • পরিচিতি
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
    • কর্মসূচি
    • গঠনতন্ত্র
    • সাবেক সভাপতিবৃন্দ
    • সাবেক সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ
  • সাংগঠনিক কাঠামো
    • কেন্দ্রীয় সংগঠন
    • কেন্দ্রীয় সভাপতি
    • সাধারণ সম্পাদক
    • কার্য নির্বাহী পরিষদ
    • কার্যকরী পরিষদ
  • শাখা সংগঠন
    • মহানগর
    • জেলা
    • উপজেলা
    • সাংগঠনিক স্তর
    • অঞ্চল
  • ট্রেড ইউনিয়ন
    • ক্রাফট ফেডারেশন
    • জাতীয় ইউনিয়ন
    • বেসিক ইউনিয়ন
  • সংবাদ
    • সকল সংবাদ
    • সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
    • বিবৃতি
    • শোকবার্তা
    • অন্যান্য
  • ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম
    • পরিবহন
    • গার্মেন্টস
    • রিকশা
    • কৃষি ও মৎস্য
    • নৌ পরিবহন
    • রেলওয়ে
    • দর্জি
    • ইমারত/নির্মাণ
    • চাতাল
    • স্থল বন্দর
    • দোকান কর্মচারী
    • হকার্স
    • হোটেল কর্মচারী
    • হাসপাতাল শ্রমিক
    • পাটকল শ্রমিক
    • ফার্নিচার
    • তাঁত শ্রমিক
    • বিটিসিএল
    • ব্যাংক কর্মচারী
    • স্টিল এন্ড রি-রোলিং শ্রমিক
    • লোড আনলোড/কুলি
    • অন্যান্য
  • প্রকাশনা
    • নববর্ষ
    • বই
    • পোস্টার
    • বিজ্ঞাপন
    • ক্যালেন্ডার
    • দাওয়াতি স্টিকার
    • লিফলেট
    • স্মারক/স্মরণিকা
    • অন্যান্য
  • দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা
  • আর্কাইভ
    • কুরআনের শিক্ষা
    • হাদিসের শিক্ষা
    • প্রবন্ধ/নিবন্ধ
  • যোগাযোগ
English

কপিরাইট © 2024 বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন.