১. প্রশ্ন: নিম্নতম মজুরি বোর্ড কী এবং এটি কোন আইনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৩৮ ধারায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, উক্ত ধারায় ১নং উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড নামে একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করবে। ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, নিম্নতম মজুরি বোর্ড অতঃপর এই অধ্যায়ে মজুরি বোর্ড বলে উল্লিখিত, নিম্নরূপ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে। একজন চেয়ারম্যান, একজন নিরপেক্ষ সদস্য, মালিক ও শ্রমিকের পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মজুরি বোর্ড গঠিত হবে।
২. প্রশ্ন: নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাজ কী?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৩৯ ধারায় মজুরি বোর্ডের কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে। নিম্নতম কাজগুলি উল্লেখ করা হলো;
ক. মজুরি বোর্ড শ্রমিকগণ বা শ্রমিক শ্রেণির জন্য নিম্নতম মজুরি হার সুপারিশ করতে পারবে।
খ. মজুরি বোর্ড ৬ মাসের মধ্যে সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ করবে, তবে মজুরি বোর্ডের অনুরোধে এই সময় বৃদ্ধি হতে পারে।
গ. মেয়াদী কাজ এবং ঠিকা কাজের জন্য নিম্নতম মজুরি হার নির্ধারণ করবে।
ঘ. মজুরি বোর্ড কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদী হার ঘণ্টা, দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে হতে পারে।
৩. প্রশ্ন: ন্যূনতম মজুরি হার কত বছর পর পর নির্ধারণ হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৩৯ ধারার ৬ নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের জন্য স্থিরকৃত নূন্যতম মজুরি হার সরকারের নির্দেশনাক্রমে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পুনঃনির্ধারণ করবে।
৪. প্রশ্ন: নিম্নতম মজুরি হার ঘোষণার ক্ষমতা কার?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৪০ ধারায় বলা হয়েছে, ধারা ১৩৯ এর অধীন মজুরি বোর্ডের সুপারিশ পাবার পর সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষণা করতে পারবে যে, মজুরি বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন শ্রমিকের জন্য সুপারিশকৃত নিম্নতম মজুরির হার, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে উক্তরূপ শ্রমিকগণের জন্য নিম্নতম মজুরি হার হবে।
৫. প্রশ্ন: সংবাদপত্র শ্রমিকগণের মজুরি বোর্ড কী আলাদা হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৪৩ ধারায় সংবাদপত্র শ্রমিকগণের জন্য আলাদা মজুরি বোর্ড এর কথা বলা হয়েছে। সংবাদপত্র শ্রমিকগণের মজুরি নির্ধারণের জন্য সংবাদপত্র শ্রমিক মজুরি বোর্ড নামে একটি স্বতন্ত্র মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে। সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একজন চেয়ারম্যান এবং সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সংবাদপত্র শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী সমসংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে সংবাদপত্র শ্রমিক মজুরি বোর্ড গঠিত হবে।
৬. প্রশ্ন: নিম্নতম মজুরি প্রত্যেক মালিকের উপর অবশ্য পালনীয় কী?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৪৮ ধারায় বলা হয়েছে, মজুরির নিম্নতম হার সংশ্লিষ্ট সকল মালিকের উপর অবশ্য পালনীয় হবে এবং প্রত্যেক শ্রমিক উক্তরূপ ঘোষিত বা প্রকাশিত মজুরির অন্যূন হারে মজুরি পেতে অধিকারী হবে।
শ্রম আইনের ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মালিক কোনো শ্রমিককে ঘোষিত বা প্রকাশিত নিম্নতম হারের কম হারে কোন মজুরি প্রদান করতে পারবেন না।
৭. প্রশ্ন: মজুরি পরিশোধের দায়িত্ব কার?
উত্তর: শ্রম আইনের ১২১ ধারায় মজুরি পরিশোধ দায়িত্ব কার সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক মালিক কর্তৃক নিযুক্ত প্রত্যেক শ্রমিককে সকল মজুরি পরিশোধ করার জন্য দায়ী থাকবেন।
৮. প্রশ্ন: মজুরি পরিশোধের সময় কত দিন?
উত্তর: শ্রম আইনের ১২৩ ধারায় মজুরি পরিশোধের সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে। ১২৩ ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোন শ্রমিকের যে মজুরিকাল সম্পর্কে তার মজুরি প্রদেয় হয় সেই কাল শেষ হবার পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তার মজুরি পরিশোধ করতে হবে। ২ উপধারায় আরও বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোন শ্রমিকের চাকরি তার অবসর গ্রহণের কারণে অবসান হয় অথবা মালিক কর্তৃক তার চাকরি অবসান হয় সেক্ষেত্রে উক্ত শ্রমিককে প্রদেয় সকল মজুরি তার চাকরি অবসানের তারিখ হতে পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
৯. প্রশ্ন: শ্রমিকের মজুরি কিসের মাধ্যমে পরিশোধ করবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১২৪ ধারায় বলা হয়েছে, সকল মজুরি প্রচলিত মুদ্রা, কারেন্সী নোট অথবা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও শ্রমিকের ব্যাংক একাউন্টে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি পরিশোধ করা যাবে।
১০। প্রশ্ন: ক্ষতি বা বিনষ্টির জন্য মালিক কোনো মজুরি কর্তন করতে পারবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১২৫ ধারায় ক্ষতি বা বিনষ্টির জন্য মালিক কোন মজুরি কর্তন করতে পারবে কি না সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত ধারার ২ উপধারা বলা হয়েছে, এই আইন দ্বারা অনুমোদিত কর্তনের ক্ষেত্র ব্যতিত অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোনো শ্রমিকের মজুরি হতে কিছুই কর্তন করা যাবে না। কেবলমাত্র এই আইনের বিধান অনুযায়ী কোন শ্রমিকের মূল মজুরি হতে কর্তন করা যাবে তবে কোন কর্তন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের অবহেলা বা গাফিলতির কারণে ঘটিত মালিকের ক্ষতি বা বিনষ্টির পরিমাণ অপেক্ষা বেশি হবে না এবং উক্তরূপ কোন কর্তন করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না উক্ত কর্তনের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচারের নীতি অনুসরণ করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে উক্ত শ্রমিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
১১. প্রশ্ন: মৃত ও নিখোঁজ শ্রমিকের অপরিশোধিত মজুরি কে প্রাপ্য হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কোন শ্রমিককে মজুরি হিসেবে প্রদেয় সকল অর্থ তার মৃত্যুজনিত কারণে অথবা তার কোনো খোঁজ না পাওয়া গেলে শ্রমিক কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিকে অথবা মৃত শ্রমিকের আইনগত উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীগণকে তা প্রদান করা হবে। কোনো মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারী না থাকলে অথবা পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে কোনো কারণে উক্তরূপ কোনো মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীকে উক্ত অর্থ প্রদান করা সম্ভব না হলে প্রদেয় অর্থ সরকারি ফান্ড শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে জমা হবে। ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে, পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীর খোঁজ না পাওয়া গেলে জমারত অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থ বলে বিবেচিত হবে।
১২. প্রশ্ন: মজুরি কর্তন বা মজুরি বিলম্বে পরিশোধ করলে কোথায় দাবি তুলে ধরতে হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কোন শ্রমিকের মজুরি কর্তন করলে অথবা মজুরি পরিশোধ না করে অথবা তার মজুরি বা কোন বিধির আওতায় প্রদেয় গ্রাচ্যুইটি বা ভবিষ্যৎ তহবিলের প্রাপ্য পরিশোধ বিলম্বে ঘটে সে ক্ষেত্রে তিনি, অথবা তার মৃত্যু হলে তার কোনো উত্তরাধিকারী অথবা আইনসঙ্গত প্রতিনিধি কর্তৃক মজুরি ফেরত পাবার জন্য অথবা বকেয়া বা বিলম্বিত মজুরি ও অন্যান্য পাওনা আদায়ের জন্য শ্রম আদালতে দরখাস্ত দাখিল করতে পারবেন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা ও আইনজীবী লেবার কোর্ট, ঢাকা।